আনখেসেনামুন : তুতানখামুনের মহান রাজকীয় স্ত্রী 






আনখেসেনামুন : ক্ষমতাবান মিশরীয় রানী











আনখেসেনামুন  এমন এক সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যখন মিশর একটি অভূতপূর্ব ধর্মীয় বিপ্লবের মধ্যে ছিল। তার বাবা আতেনের পক্ষে মিসরের পুরানো দেব দেবীদের প্রধান উপাসনা পরিত্যাগ করেছিলেন যা এখনও পর্যন্ত সূর্য দেবতার একটি ছোট দিক , যা সূর্যের চাকতি হিসাবে চিহ্নিত। 



তিনি থিবেসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। তার পিতার রাজত্বের চতুর্থ বর্ষের দিকে , তবে সম্ভবত তার বাবা কতৃক রাজ্যের নতুন রাজধানী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত আখেতাটেন শহরে বেড়ে ওঠেন। রাজা আতেনের তিনটি মেয়ে - মেরিটাতেন , মেকেটাতেন এবং আনখেসেনামুন। জ্যেষ্ঠ রাজকুমারী রাজকার্যের ও ধর্মীয় কাজে পিত মাতার সাথে অংশগ্রহণ করেন। 







আনখেসেনামুন : ক্ষমতাবান মিশরীয় রানী









আনখেশেনামুন তার নিজের বাবার সাথে প্রথম বিয়ে করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয় , যা মিশরীয় রাজপরিবারের জন্য অস্বাভাবিক ছিলোনা।  তিনি রাজ্কন্যা আখেসেনপাতেন তাশেরিত এর মা ছিলেন বলে মনে করা হয় , যদিও পিতা মাতা অস্পষ্ট। 






তার পিতার মৃত্যুর পর এবং নেফারনেফেরুটেনের সংক্ষিপ্ত রাজত্বের পর তিনি তুতানখামুনের স্ত্রী হন। তাদের বিবাহের পরে দম্পতি তাদের নাম পরিবর্তন করে তুতানখামুন এবং আনখেসেনামুন করে এবং তাদের পুনরুদ্ধার করা ধর্মের দেবতাদের সম্মান করেছিল। 





আনখেসেনামুন : ক্ষমতাবান মিশরীয় রানী











আনখেসেনামুনের আসল নাম ছিল আনখেসেন পাতেন।  পরবর্তীতে তার নাম বদলিয়ে আনখেসেনামুন রাখা হয়। আনখেসেনামুন অর্থ তার জীবন আমুনের। তিনি ছিলেন প্রাচীন মিশরের অষ্টদশ রাজবংশীয় একজন রানী। তিনি তার বাবার ৬ কন্যার মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। তার বয়স যখন ১৩ বছর তখন তাকে তার সৎ ভাই তুতেনখামেনের সাথে বিয়ে দেয়া হয় , তখন তুতেনখামেনের বয়স ৮-১০ বছর। তুতেনখামেনের সাথে বিয়ের আগে আনখেসেনামুনকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল তার বাবা আখেনাতেনের সাথে। এবং তুতানখামেনের মৃত্যুর পর ফেরাউন আইয়ের সাথে  হয়, সম্পর্কে যিনি ছিলেন আনখেসেনামুনের পিতামহ।




নিজেদের পরিবারের মদ্ধ বিয়ে প্রাচীন মিশরীয় রাজ্পরিবারের ছিল একটি সাধারণ ব্যাপার। সেসময় মিশরীয় ফারাওরা নিজেদেরকে দেবতার বংশোদ্ভত মনে করতেন। ফলে বংশের ধারা বিশুদ্ধ রাখার জন্য নিজেদের পরিবারের মধ্যে বিয়ের প্রচলন ছিল। রাজা তুতেনখামেনের বাবা-মাও সম্পর্কে ছিলেন ভাই বোন। 





আনখেসেনামুন : ক্ষমতাবান মিশরীয় রানী












আনখেসেনামুনের যখন জন্ম হয় তখন মিশর এক ধর্মীয় বিপ্লবের মধ্যে বসিয়ে যাচ্ছিল। সেসময় তার পিতা আখেনাতেন মিশরের প্রাচীন দেবতাদের ত্যাগ করে একক ডঃ বোটা 'আতেন' এর উপসনা শুরু করেন। ফলে এতদিন ধরে  পূজা করে আসা দেবতা'রা' এর অনুসারীরা আখেনাটেনের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে এবং এক বড়সড় বিপল্লবের শুরু হয়।  





আরো পড়ুন :




















আখেনাতেন মিশরে একেশ্বরবাদের সূচনা করতে চেয়েছিলেন। আর তার এই পথে বাধা হয়ে দাড়ায় মিশরের ধর্মযাজকরা। সেসময় মিশরে ধর্মযাজক ছিলেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষমতাবান আখেনাতেন চেয়েছিলেন সন্তান জন্ম দিয়ে তিনি  মিশরে এই একেশ্বরবাদের ধারা বজায় রাখবেন। কিন্তু তার সেই আশা পূরণ হয়নি। আনখেসেনামুনকে বিয়ের আগে আখেনাতেন আনখেসেনামুনের দুই বড় বোনের সাথে সন্তান লাভার আশায় মিলিত হন। তবে এই  দুজনের সন্তানই গর্ভবস্থায় মারা যায়। 




আনখেসেনামুন : ক্ষমতাবান মিশরীয় রানী













আনখেসেনামুনের তার বাবার সাথে বিয়ে হওয়ার পরে তিনি  মিশরে তার বাবার বিতর্কিত অবস্থান লক্ষ্য করেন। তিনি বুঝতে পারেন, তার বাবাকে কিভাবে গোটা মিশরের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ওলটপালট করে ফেলেছেন। পরবর্তীতে আখেনাতেনের মৃত্যু হলে তার  পুত্র তুতেনখামেন মিশরের নতুন রাজা হন। এ সময় বংশের ধারা বজায় রাখার জন্য আনখেসেনামুনকে বিয়ে  তার ভাই তুতেনখামেনের সাথে। 






তুতেনখামেন সেসময় মিশরের রাজা হলেও তার বয়স ছিল কম। ফলে বিশাল সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য তাকে বিভিন্ন মন্ত্রী ও উপদেষ্টার সাহায্য নিতে হতো। আনখেসেনামুনও তার স্বামীকে রাজ্য পরিচালনায় সাহায্য করতেন। তারা দুজনে মিলে তাদের বাবা মিশরের সমাজ ব্যবস্থার যে ক্ষতি করেছিলেন তা ঠিক করার চেষ্টা করেন। তবে তুতেনখামেন খুব একটা আরামে রাজত্ব করতে পারেননি। তার একটি পা ছিল খোঁড়া। ফলে তাকে সবসময় একটি লাঠি নিয়ে হাঁটতে হতো।







 ইতিহাসবিদদের মতে, তার বাবা-মায়ের অজাচারী সম্পর্কের ফলেই তিনি এই পঙ্গুত্ব লাভ করেন। তবে তুতেনখামেন ও আনসেখেনামুন দম্পতি হিসেবে ভালোই ছিলেন বলে জানা যায়। তারা দুবার সন্তান নেয়ার চেষ্টা করেন। তবে দুঃখের ব্যাপার হলো দুবারই শিশু দুটি গর্ভপাতের ফলে মারা যায়। এর প্রমাণ মেলে তুতেনখামেনের সমাধিতে। মৃত শিশু দুইটির মমি পাওয়া যায় সেখানে। গবেষকরা মমি দুটি পরীক্ষা করে  পান, প্রথম শিশুটি প্রায় পাঁচ মাস ও দ্বিতীয় শিশুটি আট  নয় মাস গর্ভে ছিল। দুটি শিশুর শরীরেই জিনগত সমস্যার কারণে কিছু শারীরিক বিকলঙ্গতা দেখতে পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের মতে, এই জিনগত সমস্যার কারণ হলো অজাচার। 





আনখেসেনামুন : ক্ষমতাবান মিশরীয় রানী













তুতেনখামেনের বয়স বিশের কাছাকাছি থাকা অবস্থান তিনি মারা যান। তার মৃত্যর পর আনখেসেনামুনেকে বিয়ে দেওয়া হয় তার পিতামহ আইয়ের সাথে। যদিও এই বিয়ে নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। সম্ভবত আনখেসেনামুন এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। প্ৰত্নতত্ত্ববিদরা আনখেসেনামুনের লেখা এমন একটি চিঠি খুঁজে  পেয়েছেন যেটিতে আনখেসেনামুন হিট্টি রাজা প্রথম সপ্পিলুলিমাসের কাছে তার একটি পুত্রকে বিয়ে করতে চেয়ে প্রাথনা জানিয়েছিলেন। আনখেসেনামুন চেয়েছিলেন যোগ্য ও রাজবংশীয় কেউ যেন মিশরের রাজা হয়। সেদিক দিয়ে হিট্টিরা সেসময় ছিল অনেক শক্তিশালী। 









হিট্রি রাজা প্রথম সাল্লিলুলিমাস তার পুত্র জান্নানজাকে আনখেসেনামুনের কাছে প্রেরণ করে। কিন্তু মিশরে প্রবেশ করার সময় মিশর সীমান্তে জান্নানজাকে হত্যা করা হয়। এই হত্যার পেছনে ছিল হোরেমহেব নামের এক নিষ্ঠূর সেনাপ্রধান , যিনি পরবর্তীতে মিশরের রাজা হন। আর এই হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে শেষ হয় আনাখেসেনামুনের অধ্যায়। এর পরে আনখেসেনামুন কি হয়েছিল তার উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায়নি। 





আরো পড়ুন : 









 








Post a Comment