নীল নদ: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যাকে জান্নাতের বহর বলে আখ্যা দিয়েছেন
নীল নদ খ্রিস্টের জন্মের তিন হাজার একশত পঞ্চাশ বছর আগে আফ্রিকা মহাদেশের রহস্য ঘেরা এই নদ কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল মিশরীয় সভ্যতা। বিশ্বের দীর্ঘতম নদ এটি, পবিত্র হাদিস শরীফে এই নদ কে জান্নাতের নদ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। রাসুল্লুল্লাহ (সাঃ) বলেন সায়ান, জায়ান, ফুরাত ও নীল এসব জান্নাতের নহরগুলোরই অন্তর্ভুক্ত।
ইমাম নববী বলেন এই নদী-নদীকে জান্নাতের বহর বলার উদ্দেশ্য হলো এর তীরবর্তী শহরগুলোতে ইসলাম ব্যাপক ভাবে প্রসারিত হবে। নীল নদের এমন কিছু বৈশিষ্ট আছে যা প্রথিবীর অন্য কোনো না নদ-নদীতে নেই। কথাটি বলেছিলেন, মদ্ধপ্রাজ্যের অন্যতম সেরা চিকিৎসক গণিতজ্ঞ, জ্যোতি বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক ইবনে-সীনা। আশ্চর্যের বিষয় হলো নীল নদের উৎপত্তি স্থল থেকে শেষ প্রান্তের মাঝের দুরুত্ব সর্বাধিক। নীল নদের উত্তর অংশ সুদানে শুরু হয়ে মিশরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। প্রায় পুরোটাই মরুভূমির মধ্যে দিয়ে।
মিশরের সভ্যতা প্রাচীন কাল থেকে নীলের উপর নির্ভরশীল। কঙ্গো, তাঞ্জানিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা ইথিওপিয়া মিশর জুড়ে বিস্মৃত নীল নদ ভোমদ্রো সাগরে গিয়ে মিশেছে। এটিই সেই নদ যার সঙ্গে মিশে আছে মূসা (আঃ) এর স্মৃতি। যেখানে তৎকালীন জালিম বাদশা ফেরাঊনের হত্যা থেকে রক্ষা করতে মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মূসা (আঃ) কে একটি ঝুড়িতে করে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন।
আরো পড়ুন :
পবিত্র কুরআনে এর্শাদ রয়েছেন আর মূসা জননীর প্রতি নির্দেশ দিলাম তাকে দুধ পান করাও। যখন তুমি তার সম্পর্কে কোনো আশঙ্কা করবে তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করো এবং ভয় করো না, চিন্তিতও হয়না। আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং একজন রাসূল বানাবো। ঝুড়িটি ভাসতে ভাসতে ফেরাঊনের প্রাসাদ সংলগ্ন বাগানে থেমে যায়।
ফেরাউনের লোক জন সেটি উঠিয়ে নেয় এবং সেটি পরবর্তী সময়ে ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার কাছে নিয়ে এলে শিশু মূসা (আঃ) সন্দর্য দেখে তার কোমল অন্তর মাতৃস্নেহে বিগলিত হয়ে যায়। অবশেসে চির শত্রু ফেরাঊনের ঘরেই তিনি পরম যত্নে লালিত-পালিত হন। জাহিলী যুগে এই নদকে ঘিরে নানা কুসংস্কারের প্রচলন ছিল। মিশরীয়রা বিশ্বাস করতদেবতা হ্যাপিকে খুশি করা গেলে নীল নদে পানির প্লাবন আসবে, নতুন ফসল জন্মাবে। তাই তারা দেবতা হ্যাপির পূজা করতো।
শুধু তাই নয় বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে নীল নদের পানি শুকিয়ে যেত। তারা বিশ্বাস করতো একটি সুন্দরী কুমারী যুবতীকে বলি দিলেই নীল নদ পানিতে ভোরে যাবে। তাই প্রতি বছরই তারা একজন সুন্দরী কুমারী যুবতী নারীকে নীল নদে বলি দিত। মুসলিমদের মিশর বিজয়ের পর সেখানকার গভর্নর আমর-ইবনুল-আস কুসংস্কারটি চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঘোষণা দেন যুবতী বলি দেওয়ার মাদ্ধমে আর কোনো দিন নীল নদের প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে না।
ইবনে সিনা
তার এই সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে অনেকেই মিশর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি তৎকালীন খলিফা ওমর (রাঃ) কে অবহিত করা হলে তিনি নীল নদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লেখেন, তাতে লেখা ছিল এই পত্র আল্লাহর বান্দা আমীনুল মুমিনীন ওমর (রাঃ) এর পক্ষ থেকে মিশরের প্রবাহিত নীল নদের প্রতি। হাম্দ ও সালাতের পর, হে নীল নদ তুমি যদি নিজ ক্ষমতায় প্রবাহিত হয়ে থাকো তবে তোমার আবার প্রবাহিত হবার কোনো প্রয়োজন নেই, আর যদি তোমাকে আল্লাহ তায়ালা প্রবাহিত করে থাকেন তবে আমি মহান পরাক্রমশালী আল্লাহর দরবারে দোয়া করবো , তিনি যেন তোমাকে আবার আগের মতো প্রবাহিত করে দেন।
মিশরের গভর্নর হযরত আমর-ইবনুল-আস (রাঃ) এর কাছে এই চিঠি পওছার পর নীল নদের গতিরোধ হওয়ার নির্ধারিত সময়ের আগের রাতের আগেই আমর-ইবনুল-আস (রাঃ) আমিনুল মুমিনের দেওয়া এই চিঠি নীল নদে ফেলে দিলেন। পরের দিন ভোর বেলা সবাই দেখলেন এক রাতেই আল্লাহ তায়ালার হুকুমে ষোল হাত উঁচু হয়ে নীল নদ পানিতে ভর-পুর হয়ে আছে। আজ প্রবাহমান সেই নীল নদ।
Post a Comment