সিরাজ উদ দৌলা পর্ব ০১

                                                                অধ্যায়ঃ ০১
                                                             ফোর্ট উইলিয়াম 





সিরাজ উদ দৌলা - ফোর্ট উইলিয়াম । পর্ব ০১ | Siraj- ud- Daulah - Fort Willem





যবনিকা উত্তোলনের অব্যবহিত পূর্বে আবহ সংগীতের পটভূমিতে নেপথ্যে ঘোষণা -



ঘোষক : এক স্বধীন বাংলা থেকে আর এক স্বাধীন বাংলায় আসতে বহু দুর্যোগের পথ আমরা পাড়ি দিয়েছে ; বহু লাঞ্ছনা বহু গ্লানি আমরা সহ্য করেছি। দুই বাংলার মধ্যে সম্পর্ক অত্যান্ত গভীর। আজ এই নতুন দিনের প্রান্তে দঁড়িয়ে বিস্মৃত অতীতের পানে দৃষ্টি ফেরালে বাংলার শেষ সূর্যালোকিত দিনের সীমান্ত রেখায় আমরা দেখতে পাই নবাব সিরাজ উদ দৌলাকে। 

নবাব সিরাজের দুর্বহ জীবনের মর্মন্তদ কাহিনি আমরা স্মরণ করি গভীর বেদনায় , গভীর সহানুভূতিতে। সে কাহিনি আমাদের ঐতিহ্য। আজ তাই অতীতের সঙ্গে একাত্ম হবার জন্য আমরা বিস্মৃতির যবনিকা উত্তোলন করেছি। 





সিরাজ উদ দৌলা - ফোর্ট উইলিয়াম । পর্ব ০১ | Siraj- ud- Daulah - Fort Willem



                                সময় : ১৭৫৬ সাল , ১৯ শে জুন 

                                                 স্থান : ফোর্ট উইলিয়াম 


[ নবাব সৈন্য দুর্গে আক্রমণ করেছে। দুর্গের ভেতরে ইংরেজদের অবস্থা শোচনীয়। তবু যুদ্ধ না করে উপায় নেই। তাই ক্যাপ্টেন ক্লোট্রন দুর্গ প্রাচীরে এক অংশ থেকে মুষ্টিমেয় গোলন্দাজ নিয়ে কামান চালাচ্ছেন। ইংরেজ সৈন্যের মনে কোনো উৎসাহ নেই , তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ]



ক্লোট্রন :   প্রানপনে যুদ্ধ করো সাহসী ব্রিটিশ সৈনিক। যুদ্ধে জয়লাভ অথবা মৃত্যুবরণ , এই আমাদের                       প্রতিজ্ঞা। 

( গোলাগুলির শব্দ প্রবল হয়ে উঠলো।  ক্যাপ্টেন ক্লোট্রন একজন বাঙলি গোলন্দাজের দিকে এগিয়ে গেলেন। )


ক্লোট্রন : তোমরা , তোমরাও প্রানপনে যুদ্ধ করো হে বাংলী বীর। বিপদ আসন্ন দেখে কাপুরুষের মতো                    হাল ছেড়ে দিয়ো না। যুদ্ধ করো , প্রানপনে যুদ্ধ করো। 

                           (একজন প্রহরীর প্রবেশ )

ওয়ালী খান : যুদ্ধ বন্ধ করবার আদেশ দিন, ক্যাপ্টেন ক্লোট্রন। নবাব সৈন্য দুর্গের কাছে এসে পড়েছে। 

ক্লোট্রন :  না না। 


ওয়ালী খান : এখুনি যুদ্ধ বন্ধ করুন। নবাব সৈন্যর কাছে আত্মসমর্পণ না করলে দুর্গের একটি প্রানকেও                         তারা রেহাই দেবেনা। 

ক্লোট্রন : চুপ বৈঈমান।  কাপুরুষ বাঙলিদের কথাই যুদ্ধ বন্ধ হবেনা। 

ওয়ালী খান : ও সব কথা বলবেন না সাহেব। ইংরেজের হয়ে যুদ্ধ করছি কোম্পানির টাকার জন্য। তা বলে বাঙলি কাপুরুষ নয়। যুদ্ধ বন্ধ না করলে নবাব সৈন্য এখুনি তার প্রমান দেবে। 

ক্লোট্রন : কি ? যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা ?

(ওয়ালী খানকে চড় মারার জন্য এগিয়ে গেল ক্লিটন। অপর একজন রক্ষীর প্রবেশ )

জর্জ : ক্যাপ্টেন ক্লিটন , অধিনায়ক এনসাইন পিকার্ডের পতন হয়েছে। পেরিন্স পয়েন্টের সব ছাউনি                 ছাড় খাঁর করে দিয়ে নবাব সৈন্য ভারী ভারী কামান নিয়ে দুর্গের দিকে এগোচ্ছে। 


ক্লিটন : কি করে তারা এখানে আসার রাস্তা খুঁজে পেলো ?

জর্জ : উমিচাঁদের গুপ্তচর নবাব ছাউনিতে খবর পাঠিয়েছে। নবাবের পদাতিক বাহিনী দমদমের সরু                   রাস্তা দিয়ে চলে এসেছে , আর গোলন্দাজ বাহিনী শিয়ালদহের মারাঠা খাল পেরিয়ে বন্যস্রোতের               মতো ছুটে আসছে। 

ক্লিটন : ক্ষিপ্তস্বরে বাধা দেবার কেউ নেই ক্যাপ্টেন মিনচিন দমদমের রাস্তাটা উড়িয়ে দিতে পারেনি ?

জর্জ :  ক্যাপ্টেন মিনচিন , কাউন্সিলর ফানকল্যান্ড আর ম্যানিংহাম নৌকোয় করে দুর্গ থেকে পালিয়ে                গেছে। 


ক্লিটন : কাপুরুষ বেঈমান।  জ্বলন্ত আগুনের মুখে বন্ধুদের রেখে পালিয়ে যায়। চালও , গুলি চালও।                    নবাবের সৈন্যদের দেখিয়ে দাও যে বিপদের মুখে ইংল্যান্ডের বীর সন্তানেরা কতখানি দুর্জয় হয়ে                ওঠে। 

(জন হলওয়ের প্রবেশ এবং জর্জের প্রস্তান )

হলওয়ে : এখন গুলি চালিয়ে বিশেষ ফল হবে কি, ক্যাপ্টেন ক্লিটন ?

ক্লিটন : যুদ্ধ করে প্রাণ দেয়া ছাড়া আর উপায় কি সার্জন হলওয়ে ?

হলওয়ে : আমার মনে হয় গভর্নর রজার ডেকের সঙ্গে একবার পরামর্শ করে নবাব এর কাছে                                  আত্মসমর্পণ করাই এখনো যুক্ত সঙ্গত। 


ক্লিটন : তাতে কি আমরা নবাবের অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাবো ভেবেছেন ?

হলওয়ে : তবু কিসুটা আসা থাকবে।  কিন্তু যুদ্ধ করে টিকে থাকার কোনো আসা নেই। গোলা বারুদ যা                      আছে তা দিয়ে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ করা যাবেনা। ডাচদের কাছে , ফরাসিদের কাছে , সবার                   কাছে আমরা সাহায্য চেয়েছিলাম। কিন্তু সৈন্য তো দূরের কথা , এক ছটাক বারুদ ও পাঠিয়ে                     কেউ আমাদের সাহায্য করলো না। 
(বাইরে গোলার আওয়াজ প্রবলতর হয়ে উঠেছে )

ক্লিটন : তা হলে আপনি এখানে অপেক্ষা করুন। আমি গভর্নর ডেকের সঙ্গে একবার  আলাপ করে                           আসি। 
(ক্লিটনের প্রস্থান। বাইরে থেকে যথারীতি গোলাগুলির আওয়াজ আসছে। হলওয়ে চিন্তিত ভাবে এদিক ওদিক পায়চারি করছেন। )

হলওয়ে : পায়চারি থামিয়ে হটাৎ চিৎকার করে উঠলো। এই কে কোথায় আছো ?
(রক্ষীর প্রবেশ )

জর্জ : Yes Sir .


হলওয়ে : উমিচাঁদকে বন্দি করে কোথায় রাখা হয়েছে ?

জর্জ : পাশের একটা ঘরে। 

হলওয়ে : তাকে এখানে নিয়ে আসো। 

জর্জ : Right Sir .
(জর্জ দ্রুত বেরিয়ে যায় এবং পর মুহূর্তে উমিচাঁদকে নিয়ে প্রবেশ করে )

উমিচাঁদ : (প্রবেশ করতে করতে ) সুপ্রভাত , সার্জন হলওয়ে। 

হলওয়ে: সুপ্রভাত ! তাই না উমিচাঁদ ? (গোলাগুলির আওয়াজ আরো বেড়ে যায়। হলওয়ে অবাক হয়ে                   এদিক ওদিক তাকিয়ে বলেন ) নবাব সৈন্যর গোলাগুলি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল কোনো , বলুন তো ?

উমিচাঁদ : (কান পেতে শুনলো ) বোধহয় দুপুরের আহারের জন্য সাময়িক বিরতি দেয়া হয়েছে। 

হলওয়ে : এই সুযোগে সদব্যহার করতে হবে উমিচাঁদ। আপনি নবাবের সেনা অধ্যক্ষ রাজা মানিকচাঁদের                  কাছে এক খানা পত্র লিখে পাঠান। তাকে অনুরোধ করুন নবাব যেন আর যুদ্ধ না করে। 

উমিচাঁদ : বন্দীর কাছে কোনো এ প্র্রাথর্না সার্জন হলওয়ে ? (কঠিন স্বরে ) আমি গভর্নর ডেকের ধ্বংস                        দেখতে চাই।
(জর্জের প্রবেশ )


জর্জ : সার্জন হলওয়ে, গভর্নর রজার ডেক আর ক্যাপ্টেন ক্লিটন নৌকায় করে গেছে। 

হলওয়ে : দুর্গ থেকে গেছে ?

জর্জ : গভর্নরকে পালতে দেখে এক জন রক্ষী গুলি ছুঁড়েছিলো , কিন্তু  আহত হননি। 

উমিচাঁদ : দুর্ভাগ্য , পরম দুর্ভাগ্য। 

হলওয়ে : যুদ্ধ করতে করতে প্রাণ দেবেন বলে আধ ঘন্টা আগেও প্রতিজ্ঞা করেছিলেনক্যাপ্টেন ক্লাটন।                   শেষে তিনি ও  পালিয়ে গেলেন। 

উমিচাঁদ : ব্রিটিশ সিংহ ভয়ে লেজ গুটিয়ে নিলেন , এ বড় লজ্জার কথা। 

হলওয়ে : উমিচাঁদ, এখন উপায় ?


উমিচাঁদ : আবার কি ? ক্যাপ্টেন কার্নেলরা সবাই পালিয়ে গেছে , এখন ফাকা ময়দানে গাইস                                      হসপিটালের হাতুড়ে সার্জন জন জেফানিয়া হলওয়ে সর্বাধিনায়ক।  আপনিই এখন কমান্ডার                    চীফ ?
(আবার প্রচণ্ড গোলোর আওয়াজ ভেসে এলো )

হলওয়ে : উমিচাঁদ (হতাশ স্বরে ) 

উমিচাঁদ : আচ্ছা , আমি রাজা মানিকচাঁদের কাছে পত্র পাঠাচ্ছি।  আপনি দুর্গ প্রকারে সাদা নিশান                            উড়িয়ে দেন। 
(উমিচাঁদের প্রস্থান।  বাইরে গোলমালের শব্ধ শোনা গেল। দ্রুত বেগে জর্জের প্রবেশ )

জর্জ : সর্বনাশ হয়েছে।  একদল ডাচ সৈন্য গঙ্গার দিককার ফটক ভেঙে পালিয়ে গেছে।  সেই পথ দিয়ে            নবাবের সশস্ত্র পদাতিক সৈন্য হুর হুর  প্রবেশ করছে। 


হলওয়ে : সাদা নিশান ওরাও। না দুর্গের তোরণে সাদা নিশান উড়িয়ে দাও। 
(জর্জ সুটে গিয়ে সাথে সাথে সাদা নিশান উড়িয়ে দিলো।  প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নবাবের সৈন্যের অধিনায়ক রাজা মানিকচাঁদ এবং মিরমর্দনের প্রবেশ )

মীর মর্দন : এই যে দুশমনরা এখন থেকে গুলি চালাচ্ছে। 

হলওয়ে : আমরা সন্ধির সাদা নিশান উড়িয়ে দিয়েছে।  যুদ্ধের নিয়ম অনুসারে -

মীর মর্দন : সন্ধি না আত্মসমর্পণ ?

মানিকচাঁদ : সবাই অস্ত্র ত্যাগ করো। 

মীর মর্দন : মাথার উপর হাত  দাড়াও। 


মানিকচাঁদ : তুমিও হলওয়ে , মাথার উপরে হাত  দাড়াও। কেউ একচুল নড়লে প্রাণে যাবে। 
(দ্রুত গতিতে মহামান্য নবাব সিরাজের প্রবেশ।  সঙ্গে সসৈন্য সেনাপতি রায়দুর্লভ।  বন্দিরা কুর্ণিশ করে এক পাশে সরে দাঁড়ালো। সিরাজ চার পাশে ভালো করে  দেখে নিয়ে ধীরে ধীরে হলওয়ের দিকে এগিয়ে গেলেন )

সিরাজ : কোম্পানির গুষ খোর ডাক্তার রাতারাতি সেনাধক্ষ হয়ে গেছেন। তোমার কৃতকার্যের উপযুক্ত                    প্রতিফল নেয়ার জন্য তৈরি হও হলওয়ে। 

হলওয়ে : আশা করি নবাব আমাদের উপর অন্যায় জুলুম করবেননা।

সিরাজ : জুলুম ? এ পর্যন্ত তোমরা যে আচরণ করে এসেছো তাতে তোমাদের উপর সত্যিকারের জুলুম                  করতে পারলে আমি খুশি হতুম। গভর্নর ডেক কোথায় ?

হল ওয়ে : তিনি কলকাতার বাইরে গেছেন। 

সিরাজ : কলকাতার বাইরে গেছেন , না কি প্রাণ নিয়ে পালিয়েছেন ? আমি সব খবর রাখি হলওয়ে। আমি                কলকাতা আক্রমণ করবার সাথে সাথে ডেক প্রাণ ভয়ে কুকুরের মতো লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে।               কিন্তু কৈফৎ তো কেউকি দিতে হবে ? বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে বাঙলিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবার                    স্পর্ধা ইনরেজ পেলো কোথা থেকে আমি তার কৈফৎ চাই। 


হলওয়ে : আমরা নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাইনি শুদু আত্মরক্ষার জন্য -

সিরাজ : শুদু আত্মরক্ষার জন্যই কাসিমবাজার কুঠিতে তোমরা গোপনে অস্ত্র আমদানি করছিলে , তাই                   না ? খবর পেয়ে , আমার হুকুমে কাশিমবাজার কুঠি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।  বন্দি করা হয়েছে                  ওয়াটস আর কলেটকে।  রায়দুর্লভ। 

রায়দুর্লভ : হুকুম করুন জাহাঁপনা। 

সিরাজ : বন্দি ওয়াটস কে এখানে হাজির করুন। (কুর্নিশ করে রায়দুর্লভ এর প্রস্থান )

সিরাজ : তোমরা ভেবেছিলে তোমাদের অপকীর্তির খবর আমি রাখি না। 
(ওয়াটস সহ রায়দুর্লভের প্রবেশ )

ওয়াটস : Your Excellency !

সিরাজ : আমি জানতে চাই তোমাদের অবশিষ্ট আচরণের জবাবদিহি কে করবে ? কাশিমবাজার তোমরা                গোলাগুলি আমদানি করেছো , কলকাতার আশে পাশে গ্রামের পর গ্রাম তোমরা নিজেদের                       দখলে আনছো , দুর্গ মেরামত করে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছো আমার নিষেধ অগ্রাহ্য করে                     কৃষ্ণবল্লবকে তোমরা আশ্রয় দিয়েছো , বাংলার মসনদে বসবার পরআমাকে তোমরা নজরানা                   পর্যন্ত পাঠও নি। তোমরা কি ভেবেছো এই সব অনাচার আমি সহ্য করবো ?


ওয়াটস : আমরা আপনার অভিযোগের কথা কাউন্সিলের কাছে পেশ করবো। 

সিরাজ : তোমাদের ধৃষ্টতার জবাবদিহি  পর্যন্ত বাংলাদেশে তোমাদের বাণিজ্য করবার অধিকার আমি                       প্রত্যাহার করছি। 

ওয়াটস : কিন্তু বাংলাদেশে বাণিজ্য করার অধিকার আমাদের দিল্লির বাদশাহ দিয়েছেন। 

সিরাজ : বাদশাহ কে তোমরা ঘুষের টাকায় বশীভূত করেছো। তিনি তোমাদের অনাচার ডাকতে আসেন                 না। 

হলওয়ে : Your Excellency . নবাব আলীবর্দী আমাদের বাণিজ্য করবার অধিকার দিয়েছেন। 

সিরাজ : আর আমাকে তিনি যে অনুমতি করে গেছেন তা তোমাদের অজানা থাকবার কথা নয়। সে                      খবর এডমিরাল ওয়াটসন , কিলপ্যাট্রিক , ক্লাইভ সকলেরই জানা আছে। মাদ্রাজে বসে ক্লাইভ                  লন্ডনের Secret Committee র সঙ্গে যে পত্রালাপ করে তা আমার জানা নেই ভেবেছো ?  আমি                  জানি। তবুও তোমাদের বাণিজ্যে এ পর্যন্ত কোনো বিঘ্ন ঘটাই নি। কিন্তু সদ্ববহার তো দূরে থাক                    তোমাদের জন্য করুনা প্রকাশ করাও অন্যায়। 


ওয়াটস : Your Excellency  আমাদের সম্বন্ধে ভুল শোনেছেন।  আমরা এ দেশে বাণিজ্য করতে এসেছি।  
                We have come to earn money and not to get into politics . রাজনীতি আমরা কোনো করবো ?

সিরাজ : তোমরা বাণিজ্য করো ? তোমরা করো লুট।  আর তাতে বাধা দিতে গেলে তোমরা শাসন ব্যবস্থা                   ওলোট পালোট আনতে চাও।  কর্নাটকে দক্ষিণনাতে তোমরা কি করেছো ? শাসন ব্যাবস্থা                         করায়ত্ত করে অবাধে লুটতরাজ করে চলেছো। বাংলাতেও তোমরা সেই ব্যাবস্থা করতে চাও। তা                না হলে আমার নিষেধ সত্ত্বেও কলকাতার দুর্গ সংস্কর তোমরা বন্ধ করোনি কোনো ?

হলওয়ে : ফরাসি ডাকাতদের হাত থেকে আমরা আত্মরক্ষা করতে চাই। 

সিরাজ : ফরাসীরা ডাকাত আর ব্রিটিশরা অতিশয় সজ্জন ব্যাক্তি , কেমন ?

ওয়াটস : আমরা অশান্তি চাই না , Your Excellency.

সিরাজ : চাও কিনা চাও না সে বিচার  হবে। রায়দুর্লভ !


রায়দুর্লভ : হুকুম করুন , জাহাঁপনা !

সিরাজ : গভর্নর ডেকের বাড়িটি কামানের গোলায়  নিশ্চিন করে দাও দাও। গোটা ফিরিঙ্গি পাড়ায়                           আগুন ধরিয়ে ঘোষণা করে দিন সমস্ত ইংরেজ যেন কলকাতা ছেড়ে চলে যায়। আসে পাশের                    গ্ৰামগুলিকে জানিয়ে দিন তারা যেন কোনো প্রকার লেনদেন না করে ইংরেজদের সাথে। এই                   নিষেধ যে অগ্রাহ্য করলে তাকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। 


রায়দুর্লভ : হুকুম জাহাঁপনা। 

সিরাজ : আজ থেকে কলকাতার নাম হলো আলিনগর। রাজা মানিকচাঁদ আপনাকে আমি দেওয়ান                         নিযুক্ত করলাম। 

মানিকচাঁদ : জাহাপনার অনুগ্রহ। 

সিরাজ : আপনি অবিলম্বে কোম্পানির সম্পত্তি ও প্রত্যেক ইংরেজ এর ব্যাক্তিগত সম্পত্তি নবাব                               তহবিলে বাজেয়াপ্তত করুন। কলকাতার অভিযান এর খরজ বহন করবে কোম্পানির                               প্রতিনিধিরা এবং কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেক ইংরেজ। 

মানিকচাঁদ : হুকুম জাহাপনা। 


সিরাজ : নাসারার দুর্গে এই ফোর্ট উইলিয়াম এ একটি মসজিদ তৈরি করা হবে। প্রস্তুতি শুরু করুন মীর                   মর্দন। 
(সেনাপতি নত হয়ে আদেশ গ্রহণ করলেন )

সিরাজ : (উমিচাঁদের কাছে এসে তার কাঁধে হাত রেখে ) তোমাকে মুক্তি দেয়া হলো উমিচাঁদ। 
(উমিচাঁদ কৃতজ্ঞতাই নতশির )

আর (মীর মর্দনকে ) হ্যা , রাজা রাজবল্লভ এর সাথে আমার মিটমাট হয়ে গেছে। কাজে কৃষ্ণবল্লভকেও      মুক্তি  ব্যাবস্থা করুন। 

মীর মর্দন : হুকুম জাহাপনার। 

সিরাজ : হলওয়ে। 

হলওয়ে : Your Excellency. 

সিরাজ : তোমার সৈন্যদের মুক্তি দিচ্ছি , কিন্তু তুমি আমার বন্দি। (রায়দুর্লভ ) কয়েদি হলওয়ে , ওয়াটস                   আর কোলেটকে আমার সঙ্গে পাঠাবার ব্যবস্থা করুন। মুর্শিদাবাদে ফিরে গিয়ে আমি তাদের বিচার করবো। 


রায়দুর্লভ : হুকুম জাহাপনার। 
(সিরাজ বেড়িয়ে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সবাই মাথা নত করে কুর্নিশ করলো। )






সিরাজ উদ দৌলা - ফোর্ট উইলিয়াম । পর্ব ০১ - অধ্যায়ঃ ০২

                                   

You have to wait 60 seconds.



 











Post a Comment