পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী নক্ষত্র বিজ্ঞান 

astronomy







মেরু বা নক্ষত্রকে ভারতীয় পন্ডিত গণ 'দ্রুব ' ও অক্ষকে 'শলাকা ' বলে। কিছু জ্যোতিষরা ছাড়া হিন্দুদের সবাই মাত্র একটি মেরুর কথাই বলে থাকে। তাদের এরূপ বলার কারণ হচ্ছে আকাশের গম্বুজ আকৃতিতে তাদের বিশ্বাস। বায়ুপুরাণে বলা হয়েছে যে , কুমোরের চাকার মতো মেরুদণ্ডের চুতুর্দিক আকাশ আবর্তিত হচ্ছে স্থানচ্যুত না হয়ে মেরু নিজ শক্তিতে ঘোরে। ৩০ মুহূর্তে অর্থাৎ এক দিবারাত্রে তার একটি আবর্তন শেষ হয়। 



দক্ষিণ মেরু সম্বন্ধে ভারতীয় পন্ডিতদের কাছ থেকে শুনেছি যে  " সোমদত্ত নামে ওদের এক রাজা ছিল যে নিজ পুণ্যবলে স্বর্গবাসের অধিকারী হয়েছিল। কিন্তু স্বর্গারোহণকালে আত্মা থেকে তার দেহ বিচ্ছিন্ন হওয়া তার মনঃপূত না হওয়াতে সে বশিষ্ট ঋষির কাছে গিয়ে বললো যে , সে তার দেহকে ভালোবাসেন , তার থেকে বিচ্যুত হতে চায়না। ঋষি বললেন যে , পার্থিব দেহ নিয়ে স্বর্গে যাওয়া অসম্ভব। রাজা তখন বশিষ্ঠের পুত্রদের কাছে তার প্রার্থনা জানালো। তা শুনে এরা তাকে ভৎর্সনা করতে থাকে ও মুখে থুতু দিয়ে কানে বালা ও স্ত্রীলোকের কুর্তক পরিয়ে তাকে চণ্ডালে রূপান্তরিত করে দেয়। এ অবস্থায় সে বিশ্বমিত্র ঋষির কাছে এলে ঋষি তার এ দুর্গতির কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। 


বৃত্তান্ত শোনার পর বিশ্বমিত্র সোমদত্তের প্রতি দুর্ব্যবহারে অত্যান্ত ক্রূদ্ধ হয়ে বশিষ্টপুত্রদের সমেত সমস্ত ব্রাহ্মণকে এক যজ্ঞে আহব্বান করে বললেন : " আমি একটি নতুন জগৎ ও স্বর্গ রচনা করবো যাতে এই পূর্ণবান রাজার মনোস্কামনা পূর্ণ হয়। " এই বলে দক্ষিণদিকে তিনি মেরু ও সপ্তর্ষী সৃষ্টি করতে আরম্ভ করলেন। তা দেখে ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতা ভীত হয়ে সোমদত্তকে সশরীরে স্বর্গে নিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিশ্বমিত্রকে নিরস্ত্র হয়ে অনুনয় করতে লাগলেন। প্রতিশ্রুতি মতো সোমদত্তকে স্বর্গে নিয়ে যাওয়া হলে বিশ্বমিত্র দ্বিতীয় জগৎ সৃষ্টি থেকে নিরস্ত্র হলেন , কিন্তু যতটুকু সৃষ্টি হয়েছিল তা রয়ে গেল। 




পুরাণশাস্ত্র এর মতে নক্ষত্র বিজ্ঞান | According to mythology, astronomy









আমাদের মধ্যে অনেকেই জানে উত্তরমেরুকে জ্যোতিষশাস্ত্রে সপ্তর্ষি ও দক্ষিণমেরুকে অগস্ত্য বলা হয়। তবে আমাদের মধ্যে যারা অশিক্ষিত জনসাধারণের সমগোত্র তাদের ধারণা যে দক্ষিণ আকাশেও উত্তরের সপ্তর্ষির মতো আর একটি সপ্তর্ষি আছে যা দক্ষিণমেরুকে প্রদক্ষিণ করে। তা যে একেবারে অসম্ভব বা আশ্চর্য , তা না ও হতে পারে। দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা করেছে এমন কোনো বিশ্বাসী লোকের কাছ থেকে যদি এ সংবাদ পেতাম আমরা ! কারণ এ কথা নিশ্চিত যে , দক্ষিণাকাশে এমন সব নক্ষত্র দেখা যায় যার নাম আমরা জানি না। তাই শ্রীপাল বলেছেন যে , গ্রীষ্মকালে মুলতানের লোকেরা অগস্ত্যর মধ্যে রেখায় একটি লাল নক্ষত্র দেখতে পাওয়া যায় তাকে তারা ' শূল ' বলে। হিন্দুরা তাকে  করে। সেজন্য চন্দ্র যখন পূর্ব ভাদ্রপদে থাকে তখন ওরা দক্ষিণ মুখে যাত্রা করে না কারণ এই তারাটি তখন দক্ষিণে থাকে। 





কিতাবুল মাসালিক নামক গ্রন্থে আল জায়হানি বলেছেন যে লঙ্গাবালুস দ্বীপে শীতকালের প্রুত্তষে সূর্যের উদয়পথে খেজুর গাছের সামনে উঁচুতে একটি বৃহৎ নক্ষত্র দেখা যায় যা উষ্ণ তারকা বলে সেখানে পরিচিত। 


হিন্দুদের পৌরাণিক কাহিনি সমূহের মধ্যে মেরু বা নক্ষত্র সম্পর্কে আর গল্পে এমন আছে যে - ব্রহ্মমা যখন মানব সৃষ্টি করতে চাইলেন তখন নিজেকে তিনি দুই ভাগে বিভক্ত করলেন। দক্ষিণ ভাগের নাম ' বিরাজ ' আর বাম ভাগ ' মনু ' আর এই মনু থেকে মন্বন্তর বলে কালবাচক শব্দ এসেছে। মনুর দুই পুত্র হলো ' প্রিয়ব্রত ' আর ' উত্তানপাদ'। উত্তানপাদের দ্রুব নামে এক পুত্র ছিল যাকে  নিয়ে তার পিতার অন্য স্ত্রী একদিন উপহাস করে। তার মনোবেদনার সান্তনা স্বরূপ দ্রুবকে ইচ্ছা মতো সমস্ত নক্ষত্রকে ঘোরাবার ক্ষমতা দেয়া হলো। সয়ম্ভব নামক প্রথম মন্তরের দ্রুবের আবির্ভব হয়। সেই থেকে সে স্বস্থানে চিরস্তির হয়ে রয়েছে। 


Krishna_Narakasura










বায়ু পুরানে আছে : বায়ু নক্ষত্রগুলিকে মেরুর চুতুর্দিকে আবর্তিত করে। নক্ষত্রগুলি মেরুর সঙ্গে এমন এক বন্ধনে আবদ্ধ যা মানবচুক্ষুর অগোচর। সেগুলি ঘানির দণ্ডের মতো , যার মূল কেন্দ্রটি স্থির থেকে শুধু অগ্র ভাগ ঘুরতে থাকে। বিষ্ণু ধর্মেও উক্ত হয়েছে যে : নারায়ণের ভ্রাতা বলভদ্রের পুত্র বজ্র একবার মার্কগুয়ে ঋষিকে মেরুর কথা জিজ্ঞাস করলে ঋষি উত্তরে বললেন : ব্রহ্মমা যখন জগৎ সৃষ্টি করলেন তখন তা ভীষণ অন্ধকারে ছিল। তিনি তখন সূর্যের গোলককে জ্যোতিময় ও নক্ষত্রগোলোকগুলিকে জলময় করলেন যাতে সূর্যের সম্মুখ দিক থেকে তারা আলো পেতে পারে। মেরুর চুতুর্দিকে শিশুমারের আকৃতিতে তিনি চোদ্দটি নক্ষত্র স্থাপন করলেন যারা অন্য নক্ষত্রগুলিকে মেরুর চুতুর্দিকে ঘোড়ায়। তাদের মধ্যে মেরুর উত্তরে শিশুমারের উপরচিবুকে যে তারাটি তার নাম উত্তানপাদ , নিম্নচিবুকে ' যজ্ঞ ' মস্তকে ' ধর্ম ' বক্ষে ' নারায়ণ ' পূর্বদিকে দুই হাতের নক্ষত্রদ্বয় ' অশ্চষ্মিণী ' নামক বৈদ্ধদ্বয় পশ্চিম দিকে দুই পায়ে ' বরুন ' ও ' আর্যমন ' লিঙ্গে ' সমৎস্যর ' পৃষ্টে ' মিত্র ' আর লেজে ' অগ্নি ' ' মহেন্দ্র ' ও 'কাশ্যাপ'। 


বিষ্ণু ধর্মে আরো লেখা আছে : " মেরুই বিষ্ণু , সর্গবাসীদের প্রুভু। তিনিই আবার কাল যা আরম্ভ হয় , দীর্ঘ ও প্রাচীন হয় , আর ক্ষয় হয়। 


এই গ্রন্থে আরো বলা আছে : " যে এসব কথা পাঠ করবে এবং নির্ভুলভাবে হৃদয়মঙ্গল করবে ঈশ্বর তার সে দিনের সমস্ত পাপ ক্ষমা করবেন এবং তার নিদিষ্ট আয়ুষ্কাল আরো চোদ্দ বছর যোগ হবে"। 


কি সরল মন এদের ! আমাদের মধ্যে এমন লোক ও আছে যে প্রায় ১০৩০ টি নক্ষত্রের পরিচয় জানে। এই জ্ঞান আছে বলেই কি ঈশ্বর পরমায়ু দিয়ে তাকে জীবিত রেখেছেন ? 




You have to wait 60 seconds.














Post a Comment