আন্দালুস : মুর সভ্যতার ভুলে যাওয়া ইতিহাস
আলমোরাভিডরা ছিল সেনেগাল নদীর গভীর থেকে ইসলামপন্থী পশ্চিম আফ্রিকানদের একটি ধর্মান্ধ দল ,যারা আইবেরিয়ান উপদ্বীপে উঠেছিলো এবং ভিসিগোথের জমি দখল করেছিল ,একটি উপজাতি যা স্পেনে পরিণত হয়েছিল। এটি ৭১১ সিই থেকে শুরু করে ভিসিগোথ রাজ্যের পতন ঘটায়।
.jpg "আলমোরাভিড : মুর সভ্যতার ভুলে যাওয়া ইতিহাস")
১৪১৩ মেজরকান চার্টে সেনেগাল নদীর কাছে ১১ শতকের আলমোরাভিড জেনারেল আবু বকর ইবনে উমর ("রেক্স বুবেকার") এর ১৫ শতকের চিত্র । আবু বকর আফ্রিকায় তার বিজয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন।
আলমোরাভিডরা পর্তুগাল হয়ে ওঠার অধিকার নিয়েছিল এবং ফ্রান্সের দক্ষিণে চলে গিয়েছিলো। ইউরোপে তাদের অগ্রগতি চার্লস মার্টেল দ্বারা থামানো হয়েছিল। আইবেরিয়ান উপদ্বীপে তাদের নিয়ন্ত্রণ ইউরোপের দক্ষিণে বস্তুগত সভ্যতা নিয়ে আসে যা পর্তুগাল এবং স্পেনকে ইউরোপের সবচেয়ে উন্নত স্থান করে তোলে। এটি পর্তুগাল কে ইউরোপের সামুদ্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল ,তারপর স্পেন। ১৬ শতকে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স ইউরোপের সমুদ্রগামী দেশগুলিতে যোগদান করবে।
( আলমোরাভিড দিনার মুদ্রা )
স্পেনে এই আফ্রিকানদের শাসনের সময় ,ইউরোপের দক্ষিণে ইহুদিরা ভিসিগোথদের দমনমূলক নিয়ন্ত্রন থেকে মুক্ত হয়েছিল। এই আফ্রিকানদের শাসনামলে প্রথমবার মতো স্পেনে রাস্তার আলো চালু হয়। রাষ্ট্রশিল্প এবং সংগঠিত কৃষিও চালু করা হয়েছিল,পশ্চিম আফ্রিকার নাইজার নদীর অঞ্চলের কৃষির অনুকরণে।
এর আগে ইউরোপের কোনো দেশ কৃষিভিত্তিক সমাজে পরিণত হয়নি।এটি ১৮ শতকে ইউরোপের কিছু সমাজে আসার কথা ছিল। প্রথম শতাব্দিতে পাক-রোমান যুগে রোমানরা ইউরোপে সাবান প্রবর্তন করেছিল,কিন্তু ৭ম শতাব্দীতে,রোমানের পতনের পর ইউরোপ সাবান ভুলে গিয়েছিলো।
রানী ভিক্টোরিয়া একদিন গর্ব করেছিলেন যে তিনি"ইউরোপের সব চেয়ে পরিষ্কার ব্যাক্তি,এক মাসে একবার গোসল করার জন্য। ইতিহাসবিদ,ওয়াল্টার রোডনির মতে ,খ্রিস্টীয় ১৪ শতকের অক্সফোর্ডের ধারণা ছিল যে 'স্নান একটি বিপজ্জনক ব্যাপার 'এবং ইউরোপীয়রা গোসল করা থেকে বিরত ছিল। এটি মধ্যযুগীয় ইউরোপে মারাত্মক প্লেগ নিয়ে এসেছিলো,এতটাই যে ইতিহাসবিদ এবং নৃতত্ত্ববিদ ,ইভান ভ্যান সার্তিমা (মুরের স্বর্ণযুগে ) বলেছিলেন যে ইউরোপের লোকেরা যখন সকালে আবর্জনা বের করে ,তখন মৃতদেহগুলিও সংগ্রহ করে ফেলা হয়।
(আলমোরাভিড কাফনের কাপড় )
আলমোরাভিডরা তাদের নিয়ন্ত্রিত জমিতে স্নান ঘর এবং সাবান পুনরায় চালু করে পরিস্থিতি পরিবর্তন করেছিল। এটি পরিবর্তিতে কয়েক শতাব্দী ধরে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ছিল।স্পেনের সালামানকা বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিল ইউরোপের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ,এটি পশ্চিম আফ্রিকার দডিজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে তৈরী করা হয়েছিল,একটি বিশ্ববিদ্যালয় যা খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দী থেকে শুরু হয়েছিল।
এটি আফ্রিকান লেখক এবং পরে উত্তর আফ্রিকার কিছু ইহুদি দ্বারা নির্মিত এবং শেখানো হয়েছিল। সংখ্যা পদ্ধতি ,যা আজ আমাদের কাছে হিন্দু-আরবি সংখ্যা(১২৩)নামে পরিচিত ,সেনেগাল নদী থেকে এই আফ্রিকানরা ইউরোপে নিয়ে এসেছিলো। "শুন্য"পরে আরবরা চালু করেছিল। এই যুগের ইউরোপীয়রা এই সংখ্যা পদ্ধতিকে "শয়তানের লক্ষণ"বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল। ইউরোপীয়রা যারা এই সদস্য ব্যবস্থা ব্যবহার করে ধরা পড়েছিল তাদের লিঞ্চ হওয়ার ঝুঁকি ছিল।
( গাও-সানে পাওয়া একটি স্টিল আলমোরাভিড সময়কালে)
এটি ইউরোপ এ গণিত এবং প্রকৌশলের বিকাশকে ১৩ তম শতাব্দী পর্যন্ত ধীর করে দিয়েছিলো যখন ইউরোপ রোমান পদ্ধতিতে সংযোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল,যেটি ৫ম শতাব্দীতে প্রত্যাখ্যান করেছিল ;একটি পরিস্থিতি যা সেই সময়ের অনন্যা অনেক বিশ্রী ঘটনার মধ্যে পশ্চিম রোমান সম্রাজ্যের পতনের দিকে পরিচালিত করেছিল।
পাবলিক ওয়াটার সিস্টেম ,শীতাতপ নিয়ন্তিত চশমা (যা প্রথম ১১ শতকে ডিজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎপাদিত হয়েছিল),পাকা রাস্তা ,সাহিত্য,বাদ্যযন্ত্র,বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা,বিজ্ঞান ,চিকিৎসা ,সংগঠিত স্থাপত্য,আলকেমি এবং আরো অনেক কিছু চালু করা হয়েছিল। স্পেন থেকে বেশিরভাগ ইউরোপে যেখানে আফ্রিকানরা বসতি স্থাপন করেছিল। এটি পরবর্তীতে রেনেসাঁ যুগের জন্ম দেয়।
খ্রিস্টীয় ১৪ শতকে ,এই আফ্রিকানরা আরবদের সাথে একসাথে নিজেদের মধ্যে লড়াই শুরু করে। আলমোরাভিডস ,আলমাহাদ ,উমাইয়াদের মুসলমানরা প্রায়শই মতবিরোধে ছিল,একই সময়ে খ্রিস্টধর্ম যেটি ৯ম শতাব্দী থেকে ইউরোপের বেশিরভাগ অঞ্চলে ছড়িয়ে পরতে শুরু করেছিল যেমন মাগ্যায়র ,লম্বার্ডস ,গোথস,ফ্রাঙ্কস ,স্যাক্সন,গল এবং থাই পোপ পদের অধীন।১৪৫৫ খ্রিস্টাব্দে ,পোপ নিকোলাস পঞ্চম ,একটি রোমান ষাঁড় (রোমানাস পন্টিফেক্স ) লিখেছিলেন ,সমস্ত মুর ,সারাসেন ,এবং অ-খ্রিস্টান কালো চামড়ার লোকদের চিরস্থায়ী দাসত্বের শাস্তি এবং তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে বিধর্মী হিসেবে অভিযুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারী ২,১৪৯২-এ আফ্রিকানরা যারা ইউরোপে মুরস নামে পরিচিত ছিল স্পেনের আরো বেশি মুরিস অঞ্চল দাবি করে আইবেরিয়ান উপদ্বীপে তাদের সমস্ত দুর্গ আত্মসমর্পণ করে।
_(cropped).jpg "আলমোরাভিড : মুর সভ্যতার ভুলে যাওয়া ইতিহাস")
এরপরের নিপীড়নগুলি এতটাই বড়ো এবং অমানবিক ছিল যে উসমানী সম্রাজ্যের নতুন খলিফাকে তার বিজিত ভূমিতে বসতি স্থাপনের জন্য পালিয়ে আসা ইহুদিদের রক্ষা করার জন্য জাহাজ পাঠাতে হয়েছিল। যে আফ্রিকানরা খ্রিস্টান ছিল তারা ১৮ শতক খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইউরোপের একটি অংশ ছিল এমনকি ইউরোপে বর্ণবাদ প্রচলিত হওয়ারপরে ও। তাদের মধ্যে ছিলেন রাজা ক্যাসপার।
কিছু আফ্রিকান উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকায় , বিশেষ করে মৌরিতানিয়া , মরক্কো এবং সোনহায় সম্রাজ্যে ফিরে এসেছিলো। এটি অবশেষে পশ্চিম আফ্রিকায় অস্তিরতা নিয়ে আসে যা সোনহাই সম্রাজ্যে পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে এবং ১৫৯৩ সালে সম্রাট আসকিয়া ইসহাকের অধীনে এর পতন ঘটে। এটি ঘটে ছিল যখন মরোক্কের মুকুট জুদার পাশা এবং ইউরোপীয় ভাড়াটে সৈন্যদের নিয়োগ করেছিল সোনহায় সম্রাজ্যে লুট করার জন্য ক্যানন এবং গানপাউডার ব্যবহার করে যা পশ্চিম আফ্রিকায় এখনও বড় আকারে চালু হয়নি। ১৫৯৯ সালে জুদার পাশা মরোক্কতে ফিরিয়ে আনা সোনা গলাতে ১৪০০ স্বর্ণকার লেগেছিল। জুদার পাশাকে মরোক্কর মুকুটে তার সেবার জন্য ৩০টি উট স্বর্ণ দেয়া হয়েছিল।
ডা : জন হেনরিক ক্লার্কের মতে , " আলমোরাভিউডরা স্পেন এবং পর্তুগালের মানুষের ভাষা পরিবর্তন করেনি , তারা তাদের সংষ্কৃতি দমন করেনি তারা তাদের মানবতাকে অস্ব্কীর করেনি। "
Post a Comment