ওমর খৈয়াম : কিংবদন্তি খৈয়ামের রুবাইয়াত গ্রন্থের পদ্য লেখক


ওমর খৈয়াম : কিংবদন্তি খৈয়ামের রুবাইয়াত গ্রন্থের পদ্যলেখক





গিয়াসউদ্দিন আবুল ফতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল খৈয়ম নিশাপুরি ছিলেন একজন কিংবদন্তি ইরানি কবি , গণিতবিদ , দার্শনিক ও জ্যোতিষবিদ। তার জন্ম ইরানে হলেও তিনি যুবক বয়সে সমরখন্দ পাড়ি জমান এবং সেখানে শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর বুখারায় নিজেকে মধ্যযুগের একজন প্রধান গণিতবিদ , দার্শনিক  ও জ্যোতিষবিদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। 

ওমর খৈয়ামের বীজগণিতের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ : " Treatise on Demonstration of problems of Algebra" গ্রন্থে তিনি ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধানের একটি পদ্ধতি বর্ণনা করেন। এই পদ্ধতিতে একটি পরাবৃত্তকে বৃত্তের ছেদক বানিয়ে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করা হয়। ইসলামী বর্ষপঞ্জি সংস্কারেও তার অবদান অপরিসীম। 

তিনি তার কবিতা সমগ্র , যা ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াত নাম পরিচিত , তার জন্য জগৎ বিখ্যাত। তার কাব্য প্রতিভার আড়ালে তার গাণিতিক ও দার্শনিক ভূমিকা অনেকখানি ঢাকা পড়েছে। ধারণা করা হয় রণে দেকার্তের আগে তিনি বিশ্লেষণী জ্যামিতি আবিষ্কার করেন। তিনি স্বাধীনভাবে গণিতের দ্বিপদি উপপাদ্য আবিষ্কার করেন। 



বীজগণিতে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন। বহুমুখী প্রতিভার দৃষ্টান্ত দিতে বলা হলে বিশ্বসাহিত্য কিংবা ইতিহাসে যাদের নাম উপেক্ষা করা কঠিন ওমর খৈয়াম তাদের মধ্যে অন্যতম ও শীর্ষস্থানীয়। 


Bohubrihi online courses



গণিতচর্চা 


জীবদ্দশায় ওমরের খ্যাতি ছিল গণিতবিদ হিসাবে। ইসলামী সভ্যতার জ্ঞান - বিজ্ঞানের সোনালী যুগে তথা এখন থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে বীজগণিতের যেসব উপপাদ্য এবং জ্যোতিষবিদ্যার তত্ত্ব ওমর খৈয়াম দিয়ে গেছেন। সেগুলো এখনো গণিতবিদ এবং মহাকাশ গবেষক বা জ্যোতিষবিদদের গবেষণায় যথাযথ সূত্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

তিনি পরাবৃত্ত ও বৃত্তের ছেদকের সাহায্যে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করেন। এছাড়া তিনি দ্বিপদী রাশিমালার বিস্তার করেন। ওমরের আর একটি বড় অবদান হলো ইউক্লিডের সমান্তরাল স্বীকার্যের সমালোচনা যা পরবর্তী সময়ে অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সূচনা করে। 


১০৭০ খ্রিষ্টাব্দে তার পুস্তক মাকালাত ফি আল জাবর আল মুকাবিলা প্রকাশিত হয়। এই পুস্তকে তিনি ঘাত হিসাবে সমীকরণের শ্রেণীকরণ করেন এবং দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানের নিয়মাবলী লিপিবদ্ধ করেন। এই পুস্তকে তিনি কোনিক সেকশনের বিভিন্ন ছেদকের সাহায্যে নানারকম ত্রিঘাত সমীকরণ সমাধান করেন। অর্থাৎ জ্যামিতিক পদ্ধতিতে বাস্তব মুর আছে এমন ত্রিঘাত সমীকরণ প্রথম সমাধান করেন। বর্তমানে প্যাসকেলের ত্রিভুজ নামে পরিচিত দ্বিপদী সহগের ত্রিভুজাকার ও তার অবদান। 

Amazon




জ্যোতিবিদ্যা 


ওমর খৈয়াম জ্যোতিবিদ হিসেবেও সমধিক পরিচিত ছিলেন। সেলজুকের সুলতান মেলিক শাহ ১০৭৩ সালে আরো কয়েকজন বিজ্ঞানির সঙ্গে ওমরকে ও আমন্ত্রণ জানায় একটি মানমিন্দর নির্মাণের জন্য। ওমর তখন অত্যান্ত সফলভাবে (দশমিকের ছয় ঘর পর্যন্ত ) সৌর বছরের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করেন। 

তার হিসাবে এটি ছিল ৩৬৫.২৪২১৯৮৫৮১৫৬ দিন আমরা যাকে ১ বছর বলে থাকি। এই বর্ষপঞ্জির হিসাবে প্রতি ৫,৫০০ বছরে এক ঘন্টার গড়মিল হয়ে থাকে। আমরা যে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি ব্যাবহার করি তাতে প্রতি ৩,৩০০ বছরে একদিন গোলমাল হয়ে থাকে। কিভাবে পারস্য পঞ্জিকা সংশোধন করতে হবে তাও তিনি হিসাব করেন ,১০৭৯ সালের ১৫ মার্চ সুলতান জালালউদ্দিন মেলিক শাহ সেলজুক ওমরের সংশোধিত বর্ষপঞ্জী চালু করেন। তিনি একটি তারাচিত্র বা খন্ড চিত্র ও তৈরী করেন তবে সেটি এখন আর পাওয়া যায় না। 

খৈয়ামের রুবাইয়াত

ফার্সি কাব্য-জগতে ওমর খৈয়াম এক বিশেষ চিন্তাধারা ও বিশ্বদৃষ্টির পথিকৃৎ। তিনি এমন সব চিন্তাবিদ ও নীরব কবিদের মনের কথা বলেছেন যারা সেসব বিষয়ে কথা বলতে চেয়েও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তা চেপে গেছেন। কেউ কেউ ওমর খৈয়ামের কবিতার নামে তার কবিতার অনুবাদের নামে নিজেদের কথাই প্রচার করেছেন। আবার কেউ কেউ ওমর খৈয়ামের কবিতার মধ্যে নিজের অনুসন্ধিৎসু মনের জন্য সান্তনা খুঁজে পেয়েছেন। 



Click & Buy



অসাধারণ জ্ঞানী ওমর খৈয়াম জ্যোতিবিদ্যা ও গণিতের অনেক রহস্য বা প্রশ্নের সমাধান দিয়ে গেলেও অনেক অজানা বা রহস্যময় বিষয়গুলির সমাধান জানতে না পাড়ায় আক্ষেপ করে গেছেন। তাই তিনি জীবন এবং জগতের ও পরলৌকিক জীবনের রহস্য বা দর্শন সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।

 এসব প্রশ্ন শুধু তার মনেই নয় , যুগে যুগে জ্ঞান অন্নেষণই মানুষের মনের প্রশান্ত সাগরে ও তুলেছে অশান্ত ঝড়। দার্শনিকরা ও একটি বই লিখে ও যে ভাব পুরোপুরি হৃদয়গ্রাহী করতে পারেন না , গভীর অর্থবহ চার লাইনের একটি কবিতার মধ্যে দিয়ে ওমর খৈয়াম তা সহজেই তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন :



 সৃষ্টির রহস্য জানো না তুমি , জানি না আমি 

এ এমন এক জটিল বাক্য যা পড়তে পারোনা তুমি , না আমি 

পর্দার আড়ালে তোমায় ও আমার মাঝে চলছে এ আলাপ 

পর্দা যেদিন উঠে যাবে সেদিন থাকবেনা তুমি ও আমি। 



মহান আল্লাহকে জানতে হলে আগে নিজেকে জানা প্রয়োজন এমন ইসলামী বর্ণনা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি লিখেছেন :



বিশ্ব-দেখা জামশেদিয়া পেয়ালা খুঁজি জীবন-ভর 

ফিরনু বৃথাই সাগর গিরি কান্তার বন আকাশ-ক্রোড়।

জানলাম শেষ জিজ্ঞাসিয়া দরবেশ এক মুর্শিদে 

জামশেদের এই জাম-বাটি এই আমার দেহ আত্মা মোর। 


সমাধি ও স্বরণ 


নিশাপুরে ওমর খৈয়ামের সমাধি দেখতে অনেকটা তাঁবুর মতো। তার কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা সেখানে উৎকীর্ণ করা আছে। 


ওমর খৈয়ামের ৯৭১ তম জন্মদিনে গুগল ডুডল তৈরি করে সম্মাননা প্রদান করে। 


Bohubrihi online courses



আরো পড়ুন :










Post a Comment