বাংলা সালতানাত: শামস-উদ-দীন মুহম্মদ সূর                                                    (১৫৪৫-১৫৫৫সাল)

 


বাংলা সালতানাত: আফগান শাসন আমল | পর্ব ০২







শামস-উদ-দীন ম্যুহম্মদ সূর ১৫৫৩ সাল পর্যন্ত দিল্লীর অনুগত শাসনকর্তা হিসাবেই বাংলা শাসন করেন। কিন্তু ১৫৫৩ সালে সুলতান ইসলাম শাহ সূরের মৃত্যুর পর সূর বংশের পতন আরম্ভ হয়। তার মৃত্যুর পর দিল্লীর মসনদে আরোহন করেন তার পুত্র ফিরোজ শাহ সূর। কিন্তু কিছুদিন রাজত্বের পর তাকে হত্যা করে মুবারিজ খান নিজেই মুহম্মদ শাহ আদিল উপাধি গ্রহণ করে মসনদে আরোহন করেন। তখন থেকেই দিল্লী প্রশাসনে আরম্ভ হয় চরম অরাজকতা। 


বাংলার শাসনকর্তা শামস-উদ-দীন মুহম্মদ সূর এই অরাজকতার খবর পেয়েই স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তার উপাধি হয় সুলতান শামস-উদ-দীন মুহম্মদ শাহ গাজী। সূর বংশেরই লোক হওয়ায় দিল্লীতে নিজ বংশের পতনে তিনি ব্যথিত হন। স্বাধীনতা ঘোষণা করে তিনি দিল্লীর পথে অভিযান পরিচালনা করেন এবং ক্রমে চুনার, জৌনপুর ও কালপী অধিকার নেন। মুহম্মদ শাহ আদিল তাকে প্রতিরোধ করতে এগিয়ে এসে ১৫৫৫ সালে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বাধে।



 যুদ্ধে নিহত হন সুলতান শামস-উদ-দীন মুহম্মদ শাহ গাজী। মুহম্মদ শাহ আদিল তখন শাহবায খান নামক এক সেনাপতিকে বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই সুলতান শামস-উদ-দীন মুহম্মদ শাহ গাজীর পুত্র খিজির খান গিয়াস-উদ-দীন  বাহাদুর শাহ উপাধি গ্রহণ করে শাহাবায খানকে পরাজিত কে  বাংলা অধিকার করেন।  




            সুলতান (প্রথম) গিয়াস-উদ-দীন বাহাদুর শাহ (১৫৫৬-১৫৬০ সাল)


সুলতান হওয়ার পর বাহাদুর শাহ পিতৃহত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হলেন এবং ১৫৫৭ সালে এক বিশাল বাহিনীসহ দিল্লীর পথে রওনা করলেন। এর মধ্যে মুহম্মদ আদিল শাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়েছেন তার সেনাপতি তাজ খান কররানী। এই কররানীও যোগ দিলেন বাহাদুর শাহর সঙ্গে। সুরজগড়ের অনতিদূরে ফতেহপুরে দুই পক্ষ মুকাবিলা  করে দুই পক্ষকে। সেই যুদ্ধে আদিল আদিল পরাজিত ও নিহত হন। আর বাহাদুর শাহ তাজ খান কররানীকে বিহারের শাসনভার দিয়ে গৌড়ে ফিরে আসেন। 



ওদিকে দিল্লীতেও আসে পরিবর্তন। পলায়িত বাদশা হুমায়ুন দিল্লীর মসনদ পুনরাধিকার করেন এবং কিছুদিন পর হুমায়ূনের মৃত্যু হলে দিল্লীর মসনদে অধিষ্ঠিত হন তরুণ বাদশা আকবর। জৌনপুর পর্যন্ত এলাকা মুগলদের অধিকারে চলে যায়। 


এবারে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন সুলতান বাহাদুর শাহ বিহারে শাসনকর্তা তাজ খান কররানী এবং দিল্লীর মসনদে সম্রাট আকবর। বাংলার সুলতান বাহাদুর শাহ মুগলদের বিতাড়িত  করার অভিপ্রায়ে ৩০ হাজার সৈন্যের এক বাহিনী  নিয়ে দিল্লীর পথে অগ্রসর হন। মুগল সেনাপতি খান জামান বাহাদুর শাহর গতিরোধ  করেন। এই যুদ্ধে প্রথমে বাংলার বাহিনী সাফল্য  লাভ করলেও শেষ পর্যন্ত জয় হয় মুগলদেরই। পরাজিত বাহাদুর শাহ আসেন বাংলায়। ১৫৬০ সালে  তিনি মৃত্যুমুখে  পতিত হন। 




বিশ্ব সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে জানতে ঘুরে আসুন বাংলার পাঁচ মুক্ত সাহিত্যকোষ থেকে  




               সুলতান গিয়াস-উদ-দীন জালাল শাহ (১৫৬০-১৫৬৩ সাল) 


সুলতান  গিয়াস-উদ-দীন জালাল শাহ ছিলেন সুলতান গিয়াস-উদ-দীন বাহাদুর শাহর ভাই। তিনি মুগল শক্তি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। তাই মুগলদের সঙ্গে বিবাদে না গিয়ে বাংলা শাসন করেন প্রায় তিন বছর। তার মৃত্যুর পর তারই এক পুত্র বাংলার মসনদে আরোহন করেন। কিন্তু কোনো সূত্রেই তার নাম পাওয়া যায় না এবং মাত্র কয়েক মাস রাজত্ব করার পরই এক জবরদখলকারী তাকে সরিয়ে বাংলার মসনদে আরোহন করেন। তিনিও গিয়াস-উদ-দীন উপাধি গ্রহণ করেন। 



                            সুলতান গিয়াস-উদ-দীন (১৫৬৩-১৫৬৪ সাল) 


এই জবরদখলকারী সুলতান মাত্র এক বছর এগার দিন রাজত্ব করেন। এর পরই তাকে হত্যা করে বিহারের শাসনকর্তা তাজ খান কররানী বাংলার মসনদ অধিকার করেন। বাংলায় আরম্ভ হয় কররানী বংশের শাসন। 



আরো পড়ুন :














Post a Comment