ধূমপান ছাড়ার সহজ উপায় 

                          


Dr Tasnim Jara







ধূমপান ছাড়তে চান কিন্তু পারছেন না। তাহলে এই ব্লগটি আপনার জন্যে। অনেক ধূমপায়ু আছে ছাড়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু মাঝ পথে এসে মনোবল  ফেলেন। সেজন্য প্রথমেই ধূমপানের ফলে শরীলের মধ্যে কি কি ঘটে। ক্ষতিকর দিকগুলো দেখার ফলে আপনার মনোবল বাড়বে। 




আমরা সকলেই জানি নিঃশ্বাসের সাথে আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করি। অক্সিজেন প্রথমে নাকের মধ্যে দিয়ে ফুসফুসে পৌঁছায় তারপর রক্তে মিশে যায়। ফুসফুসে আসে কোটি কোটি বায়ু ধূলি , এই বায়ু ধূলি দিয়েই অক্সিজেন রক্তে প্রবেশ করে। ধূমপান আপনার ফুসফুসের বায়ু ধূলিকে ধংস করতে থাকে। একবার বায়ু ধূলি নষ্ট হলে , পুনরায় সেই বায়ু ধূলি হয় না। কোটি কোটি বায়ু ধূলি থাকার কারণে কিছু বায়ু ধূলি নষ্ট হলে আমরা বুঝতে পারিনা। তবে নীরবে ফুসফুসের ক্ষতি হতে থাকে। 



ধীরে ধীরে অনেক বায়ু থলি নষ্ট হলে শুরু হয় শাসকষ্টের রোগ। এই শাসকষ্টের রোগ শুরু হলে তা থেকে সেরে উঠার সুযোগ নেই। শাসকষ্টের পাশাপাশি ধূমপান ক্যান্সারের হুমকি বাড়ায় অন্তত ২৫ গুন্। শুধু ফুসফুস নয় শরিলের প্রতিটা স্থানে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। মুখ , কিডনি, পাকস্থলী , গলা , ফুসফুস এমন লম্বা একটা লিস্ট আসে যেসব জায়গায় ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অনেক ধূমপানকারী বলে ধূমপান শুধু ঝুঁকি বাড়ায় , হয়তোবা আমার না ও হতে পারে। এই চিন্তা যারা করেন তাদের জন্য দুইটা সংখ্যা তুলে ধরেছি। 



Dr Tasnim Jara





০১. যারা ধূমপান করেন তাদের প্রতি ২ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যু ঘটায় ধূমপান। একটু গভীরে চিন্তা করলে দেখা যায় পৃথিবীতে প্রতি ১০০ জন ধূমপানকারী মৃত্যু হলে তার মধ্যে ৫০ জনের মৃত্যু হয় ধূমপানের জন্য। 






০২. ধূমপানকারীদের গড় হিসাব করলে দেখা যায় তারা গড় আয়ুর ৭-৮ বছর কম বাঁচে। অর্থাৎ আপনার অধূমপায়ু বন্ধু ৭০ বছর বাঁচলে আপনি বাঁচবেন ৬০-৬২ বছর। এমন কিছু ধূমপানকারী আছেন যারা বলেন যত দিন বাঁচবো তো বাঁচবো কিন্তু যত দিন বেচে আছি তত দিন মজা করে যাই। 






এখানে সমস্যা হল ধূমপান মৃত্যুর আগে মজা সহ্য করতে পারেনা। মৃত্যুর আগে বাদ সাদতে পারে না। এর মধ্যে কয়েকটি হলো :


প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে আনে অর্থাৎ বাচ্চা জন্ম দেয়ার ক্ষমতা চলে যায়। তবুও যদি বাচ্চার জন্ম হয় , তখন ওই বাচ্চার  অনেক ধরণের সমস্যার স্মুখীন হয় যেমন বাচ্চার চামড়ায় ভাঁজ পড়া , হাড় দুর্বল হওয়া , বিকলাঙ্গ হওয়া। দাঁত মাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়া , দাঁত পরে যাওয়া , চোখে সানি পড়া, শরীলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। যে কারণে করোনা হলে ঝুঁকি বেশি। ধূমপান হার্ট এট্যাক , স্ট্রোক এর ঝুঁকি বাড়ায়। এখন হয়তো বলবেন যারা ধূমপান করে না তাদের ও তো হার্ট এট্যাক ও স্ট্রোক হয়।




  কথা ঠিক কিন্তু যুক্তি ভুল। ওই মানুষগুলো যাদের হার্ট এট্যাক হয় তাদের হাই পেসার , অতিরিক্ত ওজন ও চর্বি জনিত কারণে এই একই কারণে আপনার ও হার্ট এট্যাক ও স্ট্রোক হতে পারে। উপরন্তূ ধূমপান করে আরো একটা ঝুঁকি যোগ করছেন। এই কথা গুলো সোনার পর কেউ কেউ হয়তো বলেন ধূমপানের ফলে আমার শরীলে যে ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। এখন আর ধূমপান ছেড়ে লাভ হবেনা।  এটা সম্পূর্ণ ভুল একটা কথা , আপনি যত দিনই ধূমপান করেন না কেন আপনি যখনি ধূমপান ছেড়ে দিবেন ওই মুহূর্ত থেকে আপনার শরীল নিজেকে মেরামতের কাজ শুরু করে দিবে। 





কি মেরামত করে ?

শেষ সিগারেট খাওয়ার ২০মিনিট পর আপনার হার্ট বিট ও ব্লাড পেসার ঠিক হতে থাকে। ৮ ঘন্টার মধ্যে রক্তে অক্সিজেনের পরিমান স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শরীল থেকে সব কার্বন মনোঅক্সয়েড দূর হয়ে যায়। নাকের ঘ্রান আর মুখের স্বাদ ফিরে আসে।


 ৭২ ঘন্টার মধ্যে শাষযন্ত্ৰ ভালো হতে শুরু করে , ফলে শাষ নেয়া সহজতর হয়। ৩-৯ মাসের মধ্যে ফুসফুসের ধারণ ক্ষমতা বাড়তে পারে। এক বছর পর আপনার হার্ট এট্যাকের ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে।  ৫ বছরের মধ্যে মুখ , নাক , গলা , জরায়ু , খাদ্য থলি , মূত্র থলির ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে। জরায়ুর ক্যান্সার এবং স্ট্রোক এর ঝুঁকি এক জন অধূমপায়ুর সমান হয়ে যায়। ১৫ বছর পর আপনার হার্ট এট্যাকের ঝুঁকি আর যে কখনো ধূমপান করেনি তার সমান হয়ে যায়। 











আসা করি আপনার ধূমপান করার মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। তাহলে এখন ধূমপান ছাড়ার ৭ টি উপায় নিয়ে আলোচলা করবো। 

০১. সিগারেটে আর একটাও টান দেয়া যাবেনা। যখন আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন আর ধূমপান করবেন না সে কারণে আর সিগারেট ব্যবহার করা যাবে না। গবেষণায় দেখা গেছে , হটাৎ সিগারেটে খাবার ইচ্ছা হলো আপনি মনে করলেন ১ টাই তো বা মাত্র ১ টানে কিছু হবেনা।  এমন মনে আসলে কখনোই সিগারেট ছেড়ে দেয়া সম্ভব হবেনা। একটা টান দেয়ার ফলে বেশির ভাগ ধূমপান করি আবার আগের অবস্থায় ফেরত যায়। এই জন্য আপনার মনো বল শক্ত করতে হবে। 

যে সব জিনিস দেখলে আপনার সিগারেট খাইতে মন চাইবে সে সব জিনিস সরিয়ে ফেলবেন। যে সব স্থানে আপনি ধূমপান করতেন সেই সব জায়গায় যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। যে যে টাইম আপনি সিগারেটে খাইতেন তখন ওই টাইম টা অন্য কোনো কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যাস্ত রাখবেন। 

কিছু খাবার ধূমপানের স্বাদ বাড়িয়ে দেয় ও আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। সেগুলো হলো মাংস , চা, কফি , কোমল পানীয় ইত্যাদি তাই এগুলো পরিহার করবেন। আবার কিছু খাবার ধূমপানের স্বাদকে বাড়িয়ে তোলে। যেমন ফল মূল , শাক সবজি তাই এগুলো বেশি বেশি খাবেন। 








০২. ধূমপান বন্ধক করলে আপনার প্রথম কিছু দিন খারাপ লাগবে। এই খারাপ লাগর পরিকল্পনা আগে থেকেই তৈরি করতে হবে। শরীলে যে সব বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো অস্তির লাগা , মেজাজ খারাপ হওয়া , রেগে যাওয়া আরো অনেক কিন্তু প্রথম সময়ে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। তখন নিজেকে মনে করিয়ে দিবেন এই খারাপ লাগাই আপনার শরীলে কত উপকার হচ্ছে। 





০৩. ধূমপান দমন করে রাখার উপায় খুঁজে বের করে রাখতে হবে। 
যখন সিগারেটে একটা টান দিতে খুব ইচ্ছা করবে তখন সেই ইচ্ছাটাকে দমানোর চেষ্টা করতে হবে। এই তাড়না দুই দিনের মাথায় সবথেকে প্রবল হয়। তাই নিজের মনকে অন্য দিকে নিতে হবে। কিভাবে করতে পারেন তার তিনটা উপায় :

১. একজন বন্ধু নির্ধারণ করে রাখবেন ধূমপানের ইচ্চা হলেই ফোন দিতে পারবেন , সে আপনাকে ধূমপান না করার জন্য উৎসাহ দিবে বা আপনার প্রিয় কোনো গল্প শুরু করবে। 

২. যে কারণে আপনি ধূমপান ছাড়তে চান সেটার কথা চিন্তা করেন। যদি আপনি আপনার পসন্দের কোনো মানুষের জন্য ছাড়তে চান তাইলে তার একটা ছবি রাখতে পারেন ধূমপান করার কথা মনে হলে সেটা দেখতে পারেন। 


৩. বাইরে থেকে একটু হেটে আসতে পারেন , কিন্তু হাটতে গিয়ে দোকান থেকে সিগারেট খেতে ইচ্চে করে তাহলে এই পদ্ধতি বাদ দিয়ে অন্য গুলো অবলম্বন করতে পারেন। 






Dr Tasnim Jara






০৪. ধূমপানকারী বন্ধুদের চাইতে ধূমপান করে না এমন বন্ধুদের সাথে সময় কাটাবেন। কেউ আপনাকে ধূমপান করতে বললে তাকে কিভাবে না বলবেন সেটা চিন্তা করে রাখবেন। আর এমন কোনো বন্ধু যদি থাকে যে ধূমপান ছাড়তে সফল হয়েছে তার কাছ থেকে শুনতে পারেন সে কি কি উপায় অবলম্বন করেছিল। 



০৫. ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫-১০ ব্যায়াম করা শুরু করুন। ব্যায়াম সিগারেট ছাড়তে সহায়তা করবে। 


০৬. কিছু ঔষধ , নিকোটিন প্যাচ , নিকোটিন বাবুলগাম , ইনহেলার আপনাকে সিগারেট ছাড়তে সাহায্য করবে এবং  এইগুলা ধূমপানের তাড়না কমাবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আপনার জন্য যেটা ভালো হয় ব্যবহার করবেন। 



০৭. ছেড়ে দেয়ার পর আবার ধূমপান করলে নিরাশ হবেন না। আপনি একা সফল হননি এমনটা নয় সিংহভাগ ধূমপানকারী প্রথম প্রচেষ্টায় বিফল হয়। যারা ধূমপান ছেড়েছেন তারা কয়েকবার চেষ্টার পর সফল হয়েছেন। 
তাই আপনি ছাড়ার পর কোনোক্রমে যদি একবার ধূমপান করেও ফেলেন নিরাশ হবেন না। কোন পরিস্তিতিতে আপনি নিজেকে ধূমপান করা থেকে আটকাতে পারেননি সেটা যাচাই করবেন যাতে একই ভুল আবার না হয়। 




এই পরামর্শ পছন্দ না হলে , আপনার পছন্দের ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নেন। তবুও ধূমপান বন্ধ না করে হাল ছাড়বেন না।  





  Dr . Tasnim Jara


Junior doctor at NHS England
Clinical Supervisor at University of Cambridge
Masters in evidence-based at the University of Oxford
Work at Apollo Hospitals Dhaka










Post a Comment