মেদব : আয়ারল্যান্ডের কিংবদন্তি রানীর আদ্যোপান্ত
রানী মেদবের গল্প আয়ারল্যান্ডের অন্যতম সেরা কিংবদন্তি ইতিহাস। রানী মেদব ছিলেন উগ্র , প্রলোভনসঙ্কুল , সুন্দর এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে শক্তিশালী ছিলেন। যদি কোনো পুরুষ আয়ারল্যান্ড বা ক্ৰুচনের প্রাচীন স্থানগুলির রাজা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতো তাহলে রানীর স্বামী না হয়ে রাজা হওয়া অসম্ভব ছিল।
মেদব আইরিশকে আয়ারল্যান্ডের ইতিহাস জুড়ে একজন শক্তিশালী রানী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি নির্ভীক এবং যোদ্ধার মতো ছিলেন , পাশাপাশি প্রলোভনসঙ্কুল এবং নিষ্ঠূর ছিলেন।
তিনি দেবী বা সর্বভোমত্বের প্রতিনিধি ছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয় এবং আইরিশ কিংবদন্তির মধ্যে দুটি ব্যাক্তিত্বের মধ্যে তাকে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তিনি লেইনস্টারের তারার রানী হিসাবে মেধ লেথডার্গ নামে এবং ওল এন এচ মাখটের মেধ করুচান নামে পরিচিত ছিলেন , যা পরে কনট নামে পরিচিত।
মেদব নাম বুৎপত্তি
ওল্ড আইরিশ ভাষায় মেদব নামটি আধুনিক Gailege -এ Meadhbh হয়ে ওঠে এবং পরে maeve নামে ইংরেজীতে পরিনিত হয়। মেদব - মেদুয়া শব্দের সাথে সাদৃশপূর্ণ যার অর্থ মাদক।
আরো পড়ুন :
মেদব কি একজন সত্যিকারের মহিলা ছিলেন ?
যে ঐতিহাসিক নারীকে আমরা মেদব নাম চিনি তাকে মাংসে দেবীর প্রতিনিধি হিসেবে সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা যায়। যদিও গল্পগুলো বলে যে তিনি তার ঐশরিক বৈশিষ্টের কারণে রাজবংশের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এটাও সম্ভব যে শুধুমাত্র একটি একটি রানী মেদব ছিলোনা , তার নামের সম্মান রক্ষার্থে অনেক রানীদের জন্য এই নাম ব্যবহার করা হয়েছিল।
কুরুচনের মেদব এবং লেইনস্টারের তারার সর্বভোম রানী মেধ লেথদার্গের মধ্যে অনেক সমান্তরাল পাওয়া যায়। মনে হয় ক্ৰুচনের মেদব কেবল একটি পৌরাণিক কিংবদন্তি হতে পারে যা প্রকৃত অর্থে মেদব , তারার রানী দ্বারা অনুপ্রাণিত , কিন্তু পন্ডিতরা পুরোপুরি নিশ্চিত নন।
প্রারম্ভিক জীবন
আইরিশ ঐতিহ্যে এবং কিংবদন্তিতে রানী মেদবের অত্যান্ত দুটি সংস্করণ অন্তুর্ভুক্ত , এবং গল্পগুলি সামান্য পরিবর্তিত হলেও শক্তিশালী মেদব সর্বদা একটি সামান্য সার্বভৌম দেবীর প্রতিনিধত্ব ছিল। যদিও তিনি একজন পৌরাণিক দেবতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন , কিন্তু তিনি একজন সত্যিকারের নারী ও ছিলেন , যাকে রাজারা পোত্তলিক আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস ব্যাবস্থার মধ্যে আনুষ্টানিক ভাবে বিয়ে করতেন।
মেদব একটি পবিত্র বৃক্ষের সাথে যুক্ত ছিলেন , যেমন অনেক আইরিশ দেবতাকে 'বাইল মেদব 'বলা হয় এবং তাকে প্রকৃতিভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছিল কাঠবিড়ালি এবং তার কাঁধে বসা পাখির মতো যেমন মা প্রকৃতি বা উর্বরতার দেবী। তার সৌন্দর্য অতুলনীয় বলা হয়েছে আইরিশ পৌরাণিক বা ইতিহাসে। একটি বিখ্যাত গল্পে , তাকে একটি ফর্সা মাথাওয়ালা নেকড়ের রানী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে , তিনি এত সুন্দর ছিলেন যে তার মুখ দেখলে একজন ব্যাক্তির বা যোদ্ধার বীরত্বের দুই তৃতীয় অংশ কেড়ে নিতে পারতেন তার সৌন্দর্য দ্বারা। যাই হোক , মেদবের সারাজীবনে অনেক স্বামী ছিল বলে জানা যায়।
মেদবের প্রথম স্বামী
মেদবের অনেক সম্ভাব্য ইতিহাসের একটিতে তিনি কুরুচানে মেদব নামে পরিচিত ছিলেন। এই গল্পে তার প্রথম স্বামী ছিলেন কনচোবার ম্যাক নেসা , উলাইদের রাজা। তার বাবা ইউওকিয়াড ফেডলিমিডি তাকে তার পিতা , তারার প্রাক্তন রাজা ফাচাচ ফাতনাচকে হত্যা করার জন্য পুরস্কার হিসেবে কনচোবারে দিয়েছিলেন। রানী এবং তার প্রথম স্বামী থেকে একটি পুত্র সন্তান গ্লেসনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
যাইহোক , তিনি কোন্চবারকে ভালোবাসেনি , রানী মেদব তার প্রথম স্বামীকে ছেড়ে দেয়ার পর থেকে তাদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়। পরবমেদবের র্তীতে কোণচোবার বোন ইথিনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় , কিন্তু ইথিন তার প্রস্তাব পরিত্যাগ করেন। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর ইথিন গর্ববতী হয়ে পড়েন এবং মেদব তাকে হত্যা করেছিলেন। অলৌকিকভাবে শিশুটি বেঁচে গিয়েছিলো কারণ এটি সিজারিয়ানের সময়ের আগে জন্মগ্রহণ করেছিল কারণ ইথিন মারা যাচ্ছিলো।
রানী মেদবের আরেকটি জনপ্রিয় কিংবদন্তি বিখ্যাত কবিতা 'ক্যাথ বোইন্ড ' এ কনটের উপর তার শাসনের গল্প বলেছেন। কথিত আছে যে তার পিত ইউকাইদ তৎকালীন কনটের রাজা তিন্নি ম্যাক কনরাইকে তার সিংহাসনের স্থান থেকে সরিয়ে দিয়ে জায়গায় মেদবকে স্থাপন করেছিলেন।
যাইহোক তিন্নি প্রসাদ ত্যাগ করেননি বরং মেদবের প্রেমিক হয়ে ওঠেন এবং এইভাবে রাজা এবং সহ শাসক হিসেবে ক্ষমতায় ফিরে আসেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কনচোবার দ্বারা একক যুদ্ধে নিহত হন এবং আবারো মেদব স্বামী হারা হন।
তার স্বামী হত্যার পর , মেদব ঘোষণা করেন তার পরবর্তী যে স্বামী হবেন তার তিনটি গুন্ থাকতে হবে , তাকে অবশই ভয়হীন , নিষ্টুর এবং অহংকারী হতে হবে। তিন্নি পরে তার আরো অনেক স্বামী এবং কনট এর রাজা হয়েছিল যেমন ইউছাইড দালা এবং সবচেয়ে বিখ্যাত আইলীল ম্যাক যিনি তার নিরাপত্তার প্রধান ছিলেন এবং পরে তার স্বামী ও অবশেষে রাজা হয়েছিলেন।
কুলির গবাদি পশুর অভিযান
কুলির ক্যটল রেইড হল রুদ্রিশিয়ান সাইকেলের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গল্প , যা পরে আলস্টার সাইকেল নাম পরিচিত যা আইরিশ কিংবদন্তির একটি সংগ্রহীত গল্প। এই গল্পটি আমাদের কনটের যোদ্ধা রানী সম্পর্কে সর্বাধিক অন্তর্দৃষ্টি দেয় যা বেশিরভাগের কাছে কুরুচানের মেদব নাম পরিচিত।
গল্পটি শুরু হয় মেভ বা মেদব তার স্বামী আইলিরের বিরুদ্ধে অপর্যাপ্ত বোধ দিয়ে। আইলিরের একটি জিনিস ছিল যা মেদব করেনি ফিনবেননাচ নামে একটি দুর্দান্ত ষাঁড় , এই বিখ্যাত প্রাণীটি কেবল একটি প্রাণীই ছিলোনা , আইলিল এই প্রাণীর মাধ্যমে অঢেল সম্পদ ও ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন বলে জানা গেছে। এটি মেদবকে খুব হতাশ করেছিল। কারণ সে তার প্রাণীটিকে নিতেচেয়েছিলো যা বৃহত্তম আয়ারল্যান্ডে খোঁজার পর ও পাওয়া যায়নি।
মেদব অবশেষে শুনেছিল যে তার প্রথম স্বামী কনচোবারের অঞ্চলে উলাইদ এবং রুদ্রিসিয়ান জাতির দেশ অয়লিলের ষাঁড়ের চেয়েও বড় একটি ষাঁড় রয়েছে। ডাইরে ম্যাক ফিচনা এলাকার একজন স্থানীয় কৃষক, যার নাম এখন কে.লূত ডন কুইলগ্নে নাম একটি ষাঁড়ের মালিক ছিল যাতে সে অল্প সময়ের জন্য ষাঁড়টিকে ধার করতে পারে। তিনি জমি, সমপদ এবং এমনকি যৌন সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং ডায়ার প্রাথমিকভাবে সম্নত হয়েছিল। একজন মাতাল বার্তাবাহক স্খ্লন দিয়েছিলেন যে যদি ডায়ার প্রত্যাখ্যান করেন, মেদব মূল্যবান ষাঁড়ের জন্য যুদ্ধে যাবেন এবং এইভাবেই তিনি অবিলম্বে তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন কারণ তিনি দ্বিগুন পার হয়ে গেছেন।
চুক্তি থেকে ডায়রি এর প্রত্যাহারের সাথে মেদিব মেদব আলস্টার আক্রমণ করার এবং জোর করে ষাঁড়টি নেওয়ার সুধান্ত নেয়। তিনি সারা আয়ারল্যান্ড থেকে একটি সৈন্য সংগ্রহ করেছিলেন যার মধ্যে ছিল কনচোবারের বিচ্ছিন্ন পুত্র কর্ম্যাক কন লংগাসের নেতৃত্বে আলস্টার নির্বাসুতদের একটি দল এবং তার পালক পিত ফার্গাস ম্যাক রোইচ, আলস্টারের প্রাক্তন রাজা। ৬ষ্ঠ শতাব্দীর কবিতা কোনাইলা মেদব মিচুরু'' অনুসারে, মেদব তারপর ফার্গাসকে তার নিজের লোক এবং অলস্টারের পরিণতি করতে প্রচিত করেছিল
মেডিবের বাহিনী পূর্ব দিকে উলস্টারে যাওয়ার সময় ক্লানা রুদ্রাইডের উপরে একটি রহস্যময় অভিশাপ দেওয়া হয়েছিল। আলস্টারের অভিজাত যোদ্ধারা আলস্টার জনগণকে রক্ষা করার দায়িত্ব ছিল। ভাগ্যের এই স্ট্রোকের মাধ্যমে মেদব আলস্টার অঞ্চলে সহজে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল। যখন তিনি পৌঁছেছিলেন তখন তার সেনাবাহিনী বিরোধিতা করেছিলেন একজন একাকী যোদ্ধা যিনি কু চুলাইন নাম পরিচিত ছিলেন। এই দেবতা একক যুদ্ধের দাবি করে মেডবের বাহিনীকে একমাত্র উপায়ে পরাজিত করতে চেয়েছিলেন।
Cu Chulainn- এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মেদব একের পর এক যোদ্ধা পাঠিয়েছিল, কিন্তু সে প্রত্যেককে পরাজিত করেছিল। অবশেষে আলস্টার লোকের ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল এবং মেডবের সেনাবাহিনীকে সেরা করা হয়েছিল। তিনি এবং তার লোকেরা কোনাতে ফায়ার যান কিন্তু ষাঁড় ছাড়া নয়। এই গল্পটি তার অনেক রহস্যময় এবং প্রায় অবিশ্বাস উপাদানের সাথে মেদবের দেবীর মতো প্রকৃতি এবং প্রতিকূলতা যাই হোক না কেন তার জয় করার ক্ষমতাকে চিত্রিত করে।
ডন কুয়ালাইন ডেয়ারের মহান ষাঁড়কে ক্ৰুচনে আনা হয়েছিল। যেখানে তাকে আইলীলের ষাঁড় ফিনবেঞ্চের সাথে লড়াই করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এই মহাকাব্যিক যুদ্ধে আইলীলের ষাঁড়টি মারা গিয়েছিলো এবং মেডবের মূল্যবান জানোয়ার গুরুতরভাবে আহত হয়েছিল। ডন কুয়ালাইন পরে তার ক্ষত থেকে মারা যান এবং উভয় ষাঁড়ের মৃত্যু আলস্টার এবং কনট অঁঞ্চলের মধ্যে অকারণে দ্বন্দ্বের প্রতিনিধিত্ব করে।
মেদব এর মৃত্যু
তার পরবর্তী বছরগুলিতে কুরুচনের মেদব প্রায়শই নকক্রোঘেরীর কাছে লোচ রি-র একটু দ্বীপ ইনিস ক্লোইথ্রিয়ানের একটি পুলে স্নান করতে যেতেন। তার ভাগ্নে ফুরবাইট যে বোনকে সে হত্যা করেছিল তার ছেলে এবং কনচোবার ম্যাক নেসা এবং তাই বহু মাস ধরে তার মৃত্যুর পরিকল্পনা করেছিলেন।
বলা হয় যে তিনি দড়ি নিয়ে পুল এবং তীরের মধ্যে দুরুত্ব পরিমাপ করেছিলেন এবং তার ছোট করে দিয়ে অনুশীলন করেছিলেন যতক্ষণ না তিনি দুরুত্বের একটি লাঠির উপরে একটি লক্ষ্যকে আঘাত করতে পারেন। যখন তিনি তার দক্ষতায় সন্তুষ্ট হলেন তখন তিনি অপেক্ষা করলেন যতক্ষণ না মেদব জলে স্নান করছে। কিংবদন্তি অনুসারে তিনি পানির একটি শক্ত টুকরা নিয়েছিলেন এবং তার গুলতি টিয়ে তাকে হত্যা করেছিলেন।
বলা হয় তাকে মিওসগান মেদব-এ সমাহিত করা হয়েছিল কাউন্টি স্লিগোর নকনারিয়ার চূড়ায় একটি পাথরের কেয়ার। রাথক্রোঘান কাউন্টি রোসকমনে তার বাড়িটিকেও একটি সম্ভাব্য সমাধি স্থান হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছিল যেখানে মিসগাউন বেদব নামে একটি দীর্ঘ পাথরের স্ল্যাব রয়েছে।
মেদব অবশ্যই আইরিশ সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একটি শক্তিশালী তবুও প্রায়শই নিষ্ঠুর মহিলার প্রতীক, মেদব উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং পুরুষ ও ক্ষমতা উভয়ের প্রতি আবেগ তাকে আগামী প্রতিটি প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলবে, ঠিক যেমনটি সে চেয়েছিলো।
আরো পড়ুন :
রোমান পৌরাণিক কাহিনী:সাবিন নারীদের ধর্ষণ
ভ্যালি : প্রতিশোধের নর্স ঈশ্বর
রোমান পূরণের : প্রধান দেবতা কারা ছিলেন?
ভ্যালি : প্রতিশোধের নর্স ঈশ্বর
রোমান পূরণের : প্রধান দেবতা কারা ছিলেন?
Post a Comment