ভারতীয়দের মতে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ  


the eclipse of the sun and the moon







পৃথিবীর ছায়াপাত যে চন্দ্রগ্রহণের আর চন্দ্রের ছায়াপাত সূর্যগ্রহণের কারণে , ভারতীয় জোতিষীরা তা নিশ্চিত ভাবে নির্ণয় করেছে এবং এই তথ্যের উপরে ওদের গণনাবিধি ও পঞ্জিকাদি রচিত। সংহিতা গ্রন্থে বরাহমিহির লিখেছেন : " কয়েকজন পন্ডিত মনে করেন যে রাহু দৈত্যদের একজন ছিল , তার মাতার নাম সিংহিকা। দেবতারা সমুদ্র থেকে অমৃত উত্তোলন করার পর বিষ্ণুকে সে অমৃত ভাগ করে দিতে বললেন। বিষ্ণু যখন তা করছিলেন , তখন দেবতার রূপ ধরে রাহু এসে তাদের সঙ্গে যোগ হলেন। 








বিষ্ণু তাকেও অমৃতের ভাগ দিলে সে নিয়ে পান করে ফেললো। তার সত্য পরিচয় জেনে বিষ্ণু তার মুন্ডু বা মাথা কেটে ফেললো শাস্তি স্বরূপ। তখন মুখের মধ্যে অমৃত থাকার জন্য তার মুন্ডুটি জীবিত রইলো , কিন্তু অমৃত তার দেহ পর্যন্ত যায়নি তাই তার দেহের মৃত্যু হলো। ছিন্নমুন্ডুটি তখন কেঁদে বললো , কি দোষে আমাকে এরূপ শাস্তি দেয়া হলো ? তার ক্ষতিপূরণ স্বরূপ তখন তাকে উর্ধে উঠিয়ে আকাশবাসিদের একজন করে দেয়া হলো। "






eclipse







অন্যরা বলেছেন যে রাহুর ও সূর্য চন্দ্রের মতো অবয়ব আছে , তবে অন্ধকার কৃষ্ণবর্ণ সেজন্য আকাশে তাকে দেখা যায় না। আদিপিতা ব্রহ্ম তাকে আদেশ করেছিলেন , গ্রহণ কাল ব্যাতিত কখনো যেন সে আবির্ভুত না হয়। 




আর এক দল বলেছেন , তার মস্তক ও পুচ্ছ সর্পের ন্যায়। আবার অন্যরা বলে যে কালো রং দেখা যায় তা ছাড়া রাহুর আর কোনো অবয়ব নাই। 




the eclipse









এই সব উদ্ভট ধারণা শেষ করে বরাহমিহির বলেছেন : "রাহুর যদি কোনো অবয়ব থাকত তা হলে তার ক্রিয়া স্পর্শ সাপেক্ষ হত , অথচ আমরা দেখছি সে দূর থেকেই গ্রহণ ঘটায় , যদিও আমরা জানি চন্দ্র ও তার ছয় রাশি চিহ্নের ব্যাবধান আছে। তা ছাড়া তার গতির র্হাসবৃদ্ধি ও হয় না , যার থেকে অনুমান করা যেত যে তার অবয়ব চন্দ্র ক্ষেত্রে পৌঁছানোর দরুনই গ্রহণ হয়ে থাকে। আর কেউ যদি ওই অনুমানকে ধরে রাখতে চায় , তা হলে তাকে বোঝাতে হবে রাহুর আবর্তন কি উদ্যেশে গণনা করা হয়েছে এবং তার আবর্তন বেগ সমান হওয়ার দরুন গণনা শুদ্ধ হবার তাৎপর্য বা কি। 









আর রাহুকে যদি মস্তক ও লেজবিশিষ্ট সর্প মনে করা হয় তা হলে , ছয় রাশি চিহ্নের কমই হোক বা বেশিই হোক , দূর থেকে সে গ্রহণ ঘটায় না কেনো ? মস্তক ও লেজের মধ্যে তো তার দেহ আছে যা এই অঙ্গ দুটিকে যুক্ত করে রেখেছে। তবু সূর্য , চন্দ্র বা চন্দ্রক্ষত্রের নক্ষত্র , কাউকেই সে গ্রাস করে না , কেবল দুইটি অবয়ব পরস্পরের স্মুখীন হলেই গ্রহণ হয়। যদি তা হতো এবং উদিত চন্দ্র তার একটির দ্বারা গ্রস্ত হত তা হলে অন্যটির দ্বারা সূর্য ও গ্রস্ত হতে বাধ্য হবে , তেমনই অস্তমিত চন্দ্র যদি গ্রস্ত হয় তা হলে সূর্য গ্রহণবস্তয় উদিত হবে। এর কোনোটাই কিন্তু হয় না। 













প্রকৃতপক্ষে , পৃথিবীর ছায়ামন্ডলে প্রবেশ করলেই চন্দ্রগ্রহণ হয় , আর সূর্যগ্রহণ হয় এই জন্য যে চন্দ্র তাকে আমাদের চোখ থেকে আড়াল করে দেয় আর এই জন্যই চন্দ্রগ্রহণের আবর্তন কখনো পশ্চিমদিক থেকে হয় না , সূর্যগ্রহণ ও কখনো পূর্ব দিক থেকে হয় না। বৃক্ষ সায়ার মতো পৃথিবী থেকে একটি দীর্ঘ সায়ার উপরের দিকে বিস্ত্রিত হয়। চন্দ্রের উচ্চতা যখন অল্প থাকে এবং সূর্য থেকে তার সাত রাশিচিহ্ন পরিমান ব্যাবধান থাকে , আর উত্তর বা দক্ষিণে খুব বেশি সরে না গিয়ে থাকে তা হলে সে অবস্থায় চন্দ্র পৃথিবীর এই ছায়াতে প্রবেশ করবে। 









এই ছায়ার সাথে প্রথম সংযোগ হবে পূর্ব দিক থেকে। আর চন্দ্র যখন পশ্চিমদিক থেকে এসে সূর্যের কাছে পৌঁছায় তখন সে মেঘের মতো সূর্যকে আবৃত করে ফেলে। চন্দ্র যে বস্তুর দ্বারা আবৃত হয় যেহেতু তার আয়তন বড় সেজন্য অর্ধেক আবৃত হলেই চন্দ্রের জ্যোতি অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু , সূর্যকে যে আড়াল করে তার আয়তন তেমন বড় নয় তাই গ্রহণ হলেও সূর্যের আলোর তেজ অবশিষ্ট থাকে। ভারতীয়দের মতে রাহুর জন্যই সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ হয়।  কিন্তু সূর্য ও চন্দ্রগ্রহনে রাহুর  কোনো হাত নাই এ বিষয়ে সকল পন্ডিতের রচনাই একমত। 




You have to wait 60 seconds.











Post a Comment