হোসেন শাহী আমল: সুলতান আলা -উদ-দীন হোসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯ সাল )
স্বাধীন সুলতানী আমলে এদেশে বাংলাভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ যে ওই কালের কীর্তিনিচয়ের অন্যতম ,তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। ওই সময়ে এদেশের মানুষ বিভিন্ন কারণে বাংলা,সংস্কৃত,আরবী ,ফারসি -এই চারটি ভাষা ব্যবহার করত। জনসাধারণ তখনকার চলিত বাংলা ভাষা ব্যবহার করতো বটে ,কিন্তু সংস্কৃত ভাষা বঙ্গে মুসলমান আগমনের পূর্ব থেকে রাজভাষা ও হিন্দুদের ধর্মীয় ভাষা হওয়ার কারণে জনসাধারণের মধ্যে এর একটা বিশেষ প্রতিপত্তি ছিল।
ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হকের কথায়,''মুসলিম আমলে সংস্কৃত রাজভাষার মর্যাদা হারাইল বটে,তবু হিন্দু সংস্কৃতি ও জীবনধারার সহিত পরিচিত হইবার জন্য অনেক মুসলমানও সংস্কৃত শিখিতেন। বাস্তবিকই সংস্কৃত ভাষার প্রতি মুসলমানদের কোন বিদ্বেষ ছিল না।
''প্রাক -মোগল যুগে হোসেন শাহী আমল বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ। এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান আলা -উদ-দীন হোসেন শাহ একজন অনন্যসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন লোক ছিলেন। তাহার সময়ে বাংলাদেশের সীমানা চতুর্দিকে বিস্তৃত হয়; তাহার সময়ের অনেক ঐতিহাসিক কীর্তি আবিষ্কৃত হইয়াছে ও তাহার উৎকীর্ণ অনেক শিলালিপি এবং মুদ্রা পাওয়া যায়। তিনি এবং তাহার অমাত্যেরা বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষণ করেন।
হোসেন শাহ ছিলেন বাংলায় বহিরাগত এক ভাগ্যান্বেষী। সম্ভবত ,সুলতান রুকন-উদ-দীন বারবক শাহ এর তিনি পিতা ও ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বাংলায় এসে সুলতানদের অধীনে চাকুরী গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বারবক শাহের ভাই ফতেহ শাহ মসনদ লাভের উদ্দেশে যখন স্বীয় সমর্থনে গোপন দল গঠন করেন ,তখন সম্ভবত হোসেন শাহও তার পরিবারের লোকজন ফতেহ শাহ এর পক্ষ অবলম্বন করেন।
হয়তো তখন থেকেই তারা পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন বাংলার রাজনীতির গতি-প্রকৃতি। তারতপুর দলাদলির পরিণতিতে সংঘটিত হয় একের পর এক হত্যাকান্ড,রাজ্য শাসনের নামে হাবশীদের অরাজকতা। সবই পর্যবেক্ষণ করেছিলেন হোসেন শাহ এবং পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য তৈরী করেছিলেন নিজেকে।
চতুর্থ হাবশী সুলতান মুজাফ্ফর শাহ এর উজিরও হয়েছিলেন তিনি। তাতে তিনি রাজশক্তির নিয়ন্ত্রণ লাভেও সমর্থ হয়েছিলেন। তারপর উপযুক্ত সময় যখন উপস্থিত হলো ,তখন হত্যা করলেন নিষ্ঠুর প্রকৃতির হাবশী সুলতান মুজাফ্ফর শাহকে। নিজেই আরোহন করলেন বাংলার মসনদে। গ্রহণ করলেন সুলতান আলা -উদ-দুনিয়া ওয়াদ-দীন আবুল মুজাফ্ফর হোসেন শাহ উপাধি,সংক্ষেপে সুলতান আলা -উদ-দীন হোসেন শাহ। সেটা সম্ভবত ১৪৯৩ সালের শেষ দিকে।
হোসেন শাহ এর রাজত্বকালে দিল্লীর সুলতান সিকান্দার লোদী বাংলা আক্রমণে এগিয়ে আসেন। কিন্তু প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে দিল্লীর সুলতান দিল্লীতে ফিরে যান। সুলতান হোসেন শাহ কামরূপ কামতা জয় করেছিলেন। কিন্তু আসামের কিছু অংশ জয় করলেও পরে তা হাতছাড়া হয়ে যায়। তারপর তিনি জয় করেন জাজনগর ও উড়িষ্যা। ত্রিপুরা রাজ্যেরও কিছু অংশ তিনি জয় করেছিলেন।
আরো পড়ুন :
Post a Comment