ফেরদৌসী : কিংবদন্তি শাহনামা মহাকাব্যের রচয়িতা 

ফেরদৌসী : কিংবদন্তি শাহনামা মহাকাব্যের রচয়িতা




হাকিম আবুল কাশেম ফেরদৌসী তুসি, ফেরদৌসী নামেই অধিক পরিচিত। তিনি বিখ্যাত শাহনামার রচয়িতা এবং পারস্যের একজন বিখ্যাত কবি। এটা জানা যায়নি কখনো যে কেন তিনি শাহনামায় তার নাম ফেরদৌসী ব্যবহার করেছেন। তাহলে চলুন আজ এই মহান ব্যাক্তিত্ব সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 

কিংবদন্তি কবি ফেরদৌসীর জন্ম ৯৪০ খ্রিস্টাব্দে উত্তর পূর্ব ইরানের তুস শহরের পাশে পাজ নামে একটি গ্রামে। ফেরদৌসীর প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায় এবং তার নাম নিয়েও সন্দেহ আছে। তেরো শতাব্দীতে বান্দেরি নামে শাহনামার একজন আরব অনুবাদকের মতে , ফেরদৌসীর আসল নাম "আল আমির আল হাকিম আবুল কাশেম মনসুর ইবনে আল হাসান আল ফেরদৌসী আল তুসি।

 " তার স্ত্রী একটি শিল্প পরিবার থেকে এসেছিল। ফেরদৌসীর এক পুত্র ছিল যে ৩৭ বছর বয়সে মারা যায় এবং ফেরদৌসী শাহনামায় তার পুত্রের সম্পর্কে শোক প্রকাশ করছিলো। 


সপ্তম শতাব্দীতে ফেরদৌসী মূলত সামানীয় সাম্রাজ্যের রানীর জন্য লিখেছিলেন। কিন্তু পারস্যে মুসলিম বিপ্লবের পর যখন সামানীয় সম্রাজ্যের পতন হয় তখন ফেরদৌসী নতুন শাসক মাহমুদ গজনভীকে তার লেখা উৎসর্গ করেন। 

মাহমুদ ছিলেন পারস্যের শিল্প ও সাহিত্যের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। ফেরদৌসী ৩০ বছরের (৯৭৭-১০১০) অধিক সময় নিয়ে তিনি এই মহাকাব্য রচনা করেন যা ইরানের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক সমৃদ্ধ করেছে। 


Bohubrihi online courses




কবি হিসেবে জীবন শুরু 

মনে করা হয় শাহনামার আগেও ফেরদৌসী কিছু কবিতা লিখেছিলেন কিন্তু সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৯৭৭ এর দিকে তিনি শাহনামা লেখা শুরু করেন এবং দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে তিনি ইরানের বিভিন্ন শাসক ও শাহ্দের কাহিনী তুলে ধরেন। এসময় সামানীয় রাজার কাছ থেকে গভীর পৃষ্টপোষকতা পেয়ে তিনি ৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের দিকে শাহনামার প্রথম শ্লোক লেখার কাজ সমাপ্ত করেন। 

পরবর্তীতে যখন তুর্কি গজনবী সুলতান মাহমুদ সামানীয় রাজা মনসুরকে ক্ষমতাচুত্য করে তখন ফেরদৌসী মাহমুদের গুনগান করে এবং তার লেখা চালিয়ে যান। যাইহোক সেসময় কবিদের কিভাবে সমাদর করা হতো সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে ইরানের সাহিত্য সম্পর্কে সামানীয় রাজার চেয়ে মাহমুদের আগ্রহ কমছিল বলে ধারণা করা হয়। ফলে শাহনামার পরবর্তী শ্লোক গুলোতে রাজাদের গুনগানের পরিবর্তে ফেরদৌসীর নিজস্ব আবেগ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। 


Amazon



শাহনামা 

শাহনামা হচ্ছে প্রাচীন ইরানের ইতিহাস , কৃষ্টি ও সংস্কৃতি নিয়ে বিভিন্ন কাব্যগাঁথা। এতে আছে ৯৯০ টি অধ্যায় , ৬২ টি কাহিনী। পুরো মহাকাব্যে ৬০ হাজার বার আছে অন্ত্যমিল। এটি হোমারের ইলিয়ড এর চেয়ে সাত গুন্ ও জার্মান মহাকাব্যে নিবেলুঙগেনলিয়েড এর চেয়ে ১২ গুন্ বড়।

 ইংরেজিতে এ পর্যন্ত যতগুলো অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে সবগুলোই প্রায় সংক্ষেপিত। ১৯২৫ সালে বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আর্থার এন্ড এডমন্ড ব্রাদার্স পর শাহনামার একটি অনুবাদ নয় খন্ডে প্রকাশ করেছিলেন। সেই ইংরেজি অনুবাদের কোনো পূর্ণমুদ্রণ এখন আর পাওয়া যায়না। এছাড়া রাশিয়া থেকে ও এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়। 



কিংবদন্তি 

Aliexpress


পারস্য সম্রাট সুলতান মাহমুদ যখন ফেরদৌসীকে শাহনামা লেখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তখন তিনি ফেরদৌসীর কাছে ওয়াদা করেছিলেন , মহাকাব্যে যতগুলো শব্দ থাকবে তার বিনিময় প্রত্যেক শব্দের জন্য একটি করে স্বর্ণ মুদ্রা কবিকে দেয়া হবে। এরপর ফেরদৌসী ৬০০০০ শব্দে মহাকাব্য লেখার কাজ শেষ করেন। কিন্তু সম্রাট তার প্রিয়ভাজন মন্ত্রীর পরামর্শে কবিকে ৬০০০০ রৌপ্য মুদ্রা পাঠিয়ে দেন। 

কিন্তু  কবি রৌপ্য মুদ্রা গ্রহণ করেন না সেগুলো তার চাকরদের মাঝে বিলিয়ে দেন। রাজার কানে এ খবর যাওয়া মাত্র রাজা রাগান্বিত হন ও ফেরদৌসীকে ধরে আনতে নির্দেশ দেয়। রাজার ভয়ে কবি পালিয়ে যায়। পরে রাজা যখন তার ভুল বুঝতে পারে এবং তাকে স্বর্ণমুদ্রা পাঠিয়ে দেন।  কিন্তু ততদিনে কবি মৃত্যুবরণ করেছেন। তার কন্যা এ মুদ্রা গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে কিছু মুদ্রা  কবির কবর সংস্কার করা হয় এবং কিছু গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হয়। 

আরো পড়ুন :







Shahnama

                  শাহনামা মহাকাব্যটি ক্রয় করতে ক্লিক করুন






Post a Comment