তক্ষশীলা : প্রথিবীর অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়  


তক্ষশীলা : পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়




তক্ষশীলা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, যা গ্রান্ড ট্রাস্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অন্তর্গত ছিল। 

ইতিহাস 

নগরীর আশেপাশে নবোপলীয় যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে। সম্ভবত বহু প্রাচীনকাল থেকেই এখানে মানববসতি গড়ে উঠেছে।নগরটি কখনো কখনো পুষ্কলাবতীর সঙ্গে গান্ধারের রাজধানীর দায়িত্ব পালন করেছে আবার কখনো বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র রূপে খ্যাতি অর্জন করেছে। 

প্রাচীন তক্ষশীলা নগরী ছিল হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং বর্তমান সময়েও উক্ত ধর্মদুটির ঐতিহ্যে এ স্থানটির একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। ১৯৮০ সালে বেশিকিছু এলাকাসহ তক্ষশীলাকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গার্ডিয়ান পত্রিকা ২০০৬ সালে এটিকে পাকিস্তানের শীর্ষ পর্যটন স্থান হিসেবে নির্বাচন করে। কথিত আছে, কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্র এই নগরেই রচনা করেছিলেন। 

বিভিন্ন লেখার তক্ষশীলা উল্লেখ 

পরবর্তী সময়কার বিভিন্ন লেখায় ছড়ানো ছিটানো সূত্র থেকে জানা যায় যে, তক্ষশীলার সূচনা সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ অব্দে হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, তক্ষশীলার নামকরণ হয়েছে রামের ভাই ভরত ও তার স্ত্রী মাণ্ডবীর পুত্র তক্ষের নামানুসারে। 

Bohubrihi online courses


কিংবদন্তিতে রয়েছে, তক্ষ একটি রাজ্য শাসন করতেন যার নাম ছিল তক্ষ খন্ড এবং তিনিই তক্ষশীলা নগরের প্রতিষ্ঠা করেন। দামোদর ধর্মানন্দ কৌশাম্বী প্রবর্তিত অন্য একটি তত্ত্ব অনুযায়ী, তক্ষশীল নামটি তক্ষক শব্দের সাথে সম্পর্কযুক্ত যা ছুতার বা সূত্রধর শব্দের সংস্কৃতরূপ এবং এই শব্দটি প্রাচীন ভারতের নাগা জনগোষ্ঠীর অপর একটি নাম।


হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতে আছে, কুরুর উত্তরাধিকার পরীক্ষিতকে তক্ষশীলার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করা হয়েছিল। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী পরীক্ষিতের পুত্র জনমেজয় এর সর্পসত্র যোজনায় ব্যাস কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে তার শিষ্য বৈশম্পায়ন সর্বপ্রথম তক্ষশীলাতেই মহাভারত পাঠ করেন।

পরবর্তীতে ৫ম শতাব্দীর দিকে শ্রীলংকায় লিখিত জাতক কাহিনীতেও তক্ষশীলার বর্ণনা কিছুটা বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত কিছুটা বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত হয়েছে। চৈনিক ভিক্ষু ফাক্সিয়েন ৪০৫ খ্রিস্টাব্দের তার তক্ষশীলা ভ্রমণকাহিনীতে তক্ষশীলা রাজ্যের অর্থ 'ছিন্ন মস্তক' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।  

তিনি বলেছেন যে, এই নামটির উৎপত্তি হয়েছে বুদ্ধের জীবনের একটি ঘটনা থেকে, কেননা এটিই সেই জায়গা 'যেখানে বুদ্ধ তার মাথা একটি লোককে দিয়েছিলেন'। আরেকজন চৈনিক ভিক্ষু জুয়ানজ্যাং (যিনি হিউয়েন সাং নামেও পরিচিত) ৬৩০ এবং ৬৪৩ সালে তক্ষশীলায় ভ্রমণ করেছিলেন এবং তিনি শহরটির নাম বলেছিলেন তা-চা-শি-লো।

 ধারণা করা হয় যে, সেই সময়েই শহরটি প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। টলেমির ভূগোলে তক্ষশীলাকে বর্ণনা করা হয়েছে 'তক্ষিয়ালা' হিসেবে। হিল্ডেশিম এর জন কর্তৃক ১৩৭৫ সালের দিকে প্রণীত গ্রন্থে তক্ষশীলাকে বর্ণনা করা হয়েছে এগ্রিসিলা হিসেবে। 


Amazon




প্রাচীন শিক্ষককেন্দ্র 


তক্ষশীলা কখনো কখনো পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় বিবেচিত হয়ে থাকে।তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পাঠদান করা হতো না।

কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্র এখানে রচনা করেছিলেন বলে কিংবদন্তি আছে। রাজা বিম্বিসার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জীবক এখানে অধ্যয়ন করেছিলেন। এই স্থান তৎকালীন বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের অধ্যয়নস্থল। 


শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সমাপ্ত করে উচ্চশিক্ষার জন্য আগমন করত। ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ বর্ষীয় শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষাগ্রহণ করত। অন্তত আঠারোটি বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা ছিল। যেমনঃ চিকিৎসা, হস্তীচালনা, যুদ্ধবিদ্যা, স্থাপত্যবিদ্যা, সংহ্স্কৃত ভাষা প্রভৃতি। 

আরো পড়ুন :








Post a Comment