ক্রুসেড :  সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ইতিবৃত্তি 



ক্রুসেড :  সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ইতিবৃত্তি






ক্রুসেড নাম শুনতে পেলে প্রথমে মনে আসে ইতিহাসের মহাবীর সালাউদ্দিন আয়ুবীর কথা। প্রথম ও দ্বিতীয় ক্রুসেড সম্পর্কে প্রায় সকলেই কম বেশি জানি। কিন্তু এই দুটি ধর্ম যুদ্ধের পর ক্রুসেড বাহিনী কি আবার চেষ্টা করেনি ? তারা কি চেষ্টা করেনি ধর্ম যুদ্ধের নাম সহিসংতা এবং জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের ?


ক্রুসেড ছিল যুদ্ধভিত্তিক খ্রিষ্টধর্ম ও খ্রিস্টান ইউরোপের সম্প্রসারণের বহিঃপ্রকাশ। প্রথম ও দ্বিতীয় ক্রুসেডের পর আরো কিছু ধর্মযুদ্ধ সংগঠিত হয় , সেই যুদ্ধগুলি নিয়ে  এই প্রবন্ধে আলোচনা করবো। 


তৃতীয় ক্রুসেড 

তৃতীয় ক্রুসেড রাজাদের যুদ্ধ বলা হয়। এই যুদ্ধটি ইউরোপীয় নেতাদের পুনরায় পবিত্র ভূমিকে সালাউদ্দিন আয়ুবীর কাছ থেকে দখল করার চেষ্টা। অভিযান টি সফল ছিল আবার অসফল ও ছিল বটে। এখানে সফল বলার কারণ অক্রে ও জাফার এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করা হয়েছিল। অসফল ছিল কারণ ক্রুসেডদের মূল্ লক্ষ্য যার জন্য এত সহিংসতা সেই জেরুজালেমই দখল করতে পারেনি। এবং তাদের শোচনীয় ভাবে পরাজয় বরণ করতে হয়। 

Bohubrihi online courses


দ্বিতীয় ক্রুসেডের পর জেঙ্গিদ রাজবংশ একত্রিত সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ লাভ করে এবং মিশরের ফাতেমী শাসকদের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। মিশরীয় ও সিরীয় সেনাবাহিনী পরিশেষে সালাউদ্দিনের অধীনে একত্রিত হয়। সালাউদ্দিন আয়ুবী ১১৮৭ সালে খ্রিস্টান রাষ্ট্রসমূহের দখলদারিত্ব কমাতে এবং জেরুজালেম পুনরুদ্ধর করতে তাদের নির্দেশ প্রদান করে। 

ইসলামী শাসনকে নির্মূল করতে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় হেনরি ও ফ্রান্সের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে নতুন ক্রুসেডে যোগদান করে। ১১৮৯ সালে হেনরির মৃত্যুর পর ইংরেজরা তাদের উত্তরাধিকারী রাজা প্রথম রিচার্ডের অধীনে যুদ্ধ করে। বর্ষীয়ান জার্মান সম্রাট ফেড্রিক বারবারোসাও যুদ্ধে শরিক হতে বৃহৎ সেনাবাহিনী নিয়ে আনাতোলিয়া হয়ে যাত্রা শুরু করেন।

 কিন্তু সালাউদ্দিন আয়ুবীর অত্যন্ত প্রখর সমরনীতির কারণে পবিত্র ভূমিতে পৌঁছার পূর্বেই ১১৯০ সালের ১০ জুন এশিয়া মাইনরের কাছে একটি নদীতে একটি যুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং ওই নদীতেই তাদের সলিল সমাধি হয়। এই যুদ্ধের পর জার্মান ক্রুসেডরা আশা হারিয়ে ফেলে এবং বেশিরভাগ সৈন্যদল দেশে ফিরে যায়। 


Amazon



চতুর্থ ক্রুসেড 


চতুর্থ ক্রুসেড মূলত সাজানো হয়েছিল মিশরে হামলা চালিয়ে জেরুজালেম দখলের উদ্দেশ্যে। কিন্তু মিশরে হামলা চালানোর পরিবর্তে ক্রুসেডরা গ্রিক অর্থডক্স শহর কনস্টান্টিপোলে হানা দেয় এবং দখল করে , যা ছিল বাইজাইন্টিনে সম্রাজ্যের রাজধানী। এই হামলাকে ইতিহাসের সবচেয়ে লাভজনক ও অমার্জিত লুন্ঠন বলে মনে করা হয়। 


পঞ্চম ক্রুসেড 

পঞ্চম ক্রুসেড ১২১৭ থেকে ১২২১ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল যা ইউরোপের খ্রিস্টানদের জেরুজালেম ও পবিত্রভূমি পূর্ণদখলের একটি প্রচেষ্টা ছিল মিশরের আয়ুবীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা বার্থ হয়। 

ষষ্ঠ ক্রুসেড 


১২২৮ সালে জেরুজালেম পুনরায় অধিকারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পঞ্চম ক্রুসেড শেষ হওয়ার ৭ বছর পর এটি শুরু হয়েছিল। এই ক্রুসেডের শেষ হয়েছিল খ্রিস্টানদের অধীনে জেরুজালেম আসার পর। দ্বিতীয় ফেডরিকের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে জেরুজালেম আত্মসমর্পণ করা হয় , যার ফলে রোমান সম্রাজ্যে এবং ক্রুসেডার রাজ্যগুলোর মধ্যে বৃহত্তর উত্তেজনার সূচনা হয়। 

Bohubrihi online courses



পরবর্তীতে জেরুজালেম খোয়ারিজম তুর্কিদের দ্বারা দখল করা হয়। 



সপ্তম এবং শেষ ক্রুসেড 

ফ্রান্সের সম্রাট নবম লুইয়ের দ্বারা পরিচালিত হয় সপ্তম ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ। ১২৪৮ থেকে ১২৪৫ সাল পর্যন্ত সংঘটিত হয়। যুদ্ধে রাজা নবম লুই পরাজিত এবং বন্দি হয়। আয়ুবীয় রাজবংশের শাসক আল মুয়াজ্জাম তুরানশাহের নেতৃত্বে মিশরীয় বাহিনী রাজা নবম লুইকে বন্দি করে। যুদ্ধের শেষে লুইয়ের মুক্তির জন্য ৫০০০০ স্বর্ণমুদ্রা ( তখনকার ফ্রান্সের বাৎসরিক আয়ের সমান অর্থ ) মুক্তিপণ হিসেবে দেয়া হয়। 



আরো পড়ুন :





Post a Comment