মুতার যুদ্ধ : মুহাম্মাদ (সাঃ) জীবদ্দশায় সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ  


মুতার যুদ্ধ : মুহাম্মাদ (সাঃ) জীবদ্দশায় সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ  । পর্ব ০১



 মুতার প্রান্তে ঘটে যাওয়া মুসলমান এবং রোমানদের মধ্যকার যুদ্ধ।  মুতার প্রান্ত থেকে বায়তুল মুকাদাসের দুরুত্ব মাত্র দুই মানজিল। মুহাম্মদ (সাঃ) জীবদ্দশায় মুসলমানরা যেসব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে এ যুদ্ধ ছিল সেসবের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী।  এই যুদ্ধেই খ্রিস্টান অধ্যুষিত দেশসমূহের জয়ের পথ খুলে দেয়। ৬২৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। 

মুতার যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার কারণ 


Fiverr


মুহাম্মদ (সাঃ) যায়েদ ইবনে হারেস (রাঃ) ইবনে ওমায়ের আজদিকে একখানি চিঠি সহ বসরায় গভর্নরের নিকট প্রেরণ করেন। রোমের কায়সারের গভর্নর শরহবিল ইবনে আমর গাস্সানি সেই সময়ে বালক এলাকায় নিযুক্ত ছিলেন। এই দুর্বৃত্ত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাহাবীকে গ্রেফতার করে এবং শক্তভাবে বেঁধে হত্যা করে। স্মরণ করা যেতে পারে যে , দূতহত্যা ছিল সর্বযুগেই জঘন্যতম অপরাধ। এটা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল, এমন কি এর চেয়েও গুরুতর মনে করা হয়। 


এ কারণে মুহাম্মদ (সাঃ) তার প্রেরিত দূত হত্যার খবর শোনার মুহূর্তেই মর্মাহত হন। তিনি সেই এলাকায় মোতায়নের জন্য সৈন্যদের প্রস্তুতির নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী তিন হাজার সৈন্য তৈরি করা হয়। খন্দকের যুদ্ধ ছাড়া ইতিপূর্বে অন্য কোনো যুদ্ধে মুসলমানরা তিন হাজার সৈন্য সমাবেশ করেনি। 

সেনানায়কদের প্রতি মুহাম্মদ (সাঃ) এর নির্দেশ 

Bohubrihi online courses



মুহাম্মদ (সাঃ) যায়েদ ইবনে হারেসা (রাঃ) কে এই সেনাদলের সেনাপতি মনোনীত করেন।  এরপর বলেন যে , যায়েদ যদি নিহত হয় তবে জাফর এবং জাফর যদি নিহত হন , আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা সিপাহসালার নিযুক্ত হবেন। 

মুহাম্মদ (সাঃ) মুসলিম সেনাদলের জন্য সাদা পতাকা তৈরি করেন তা যায়েদ ইবনে হারসার কাছে দেন। সৈন্যদলকে তিনি ওসিয়ত করেন যে , হারেস ইবনে ওমায়ের হত্যাকাণ্ডের জায়গায় তারা যেন স্থানীয় লোকদের ইসলামের দাওয়াত দেন। যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করেন তো ভালো , গ্রহণ না করলে আল্লাহর দরবারে সাহায্য চাইবে এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করবে। তিনি আরো বলেন , আল্লাহর নাম নিয়ে আল্লাহর পথে আল্লাহর সাথে কুফরীকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো।

Amazon


 বিস্বাসঘাতকতা করবে না, খেয়ানত করবেনা , কোনো নারী , শিশু , বৃদ্ধ এবং গির্জায় অবস্থানকারী দুনিয়া পরিত্যাগকারীকে হত্যা করবে না।  খেজুর এবং অন্য গাছ কাটবেনা , কোনো অট্টালিকা ধ্বংস করবে না। 



ইসলামী বাহিনীর রওয়ানা 

ইসলামী বাহিনী রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে সাধারণ মুসলমানরা মুহাম্মদ (সাঃ) এর মনোনীত সেনানায়কদের সালাম এবং বিদায় জানান। সেই সময় অন্যতম সেনানায়ক হজরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহ কাঁদছিলেন। তাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বললেন , আল্লাহর শপথ , দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ বা তোমাদের সাথে সম্পর্কের  আমি কাদছিনা।

 মুহাম্মদ (সাঃ) কে আল কোরানের একটি আয়াত তেলাওয়াত করতে শুনে জাহান্নামের ভয়ে আমি কাঁদছি জাহান্নামের ভয়ে আমি কাঁদছি। সেই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন , " এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তা অতিক্রম করবে , এটা তোমাদের প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত। "


আমি জানি না যে , জাহান্নামে পেশ করার পর ফিরে আসবো কিভাবে ? মুসলমানরা বললেন , আল্লাহর সালামতির সাথে আপনাদের সঙ্গী হোন। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের হেফাজত করুন এবং গনিমতের মালসহ আমাদের কাছে ফিরে আসুন। হজরত আবদুল্লাহ তখন এই কবিতা আবৃতি করেন ,


‘রহমানের কাছে মাগফেরাতের জন্যে 

মগয বের করা তলোয়ারের আঘাতের জন্যে 

বর্শা নিক্ষেপকারীর হাত, অন্ত্র কলিজা 

চিরে ফেলা আঘাত করার শক্তি দানের জন্যে 

সাহায্য চাই। আমার কবরে পাশ দিয়ে 

যাবে যারা তারা বলবে এই সেই গাজী 

যাকে আল্লাহ হেদায়াত দিয়েছেন এবং 

যিনি হেদায়অত প্রাপ্ত

মুসলিম সৈন্যরা এরপর রওয়ানা হয়ে যান। মুহাম্মদ (সাঃ) ছানিয়াতুল ওদা পর্যন্ত সেনাদলের সঙ্গে গিয়ে সৈন্যদের বিদায় জানান। 


Bohubrihi online courses


মুসলিম বাহিনীর সঙ্কট  

উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে মুসলিম সৈন্যরা মা'আন  নামক এলাকায় পৌঁছালেন। এ স্থান ছিল হেজাজের সাথে সংশ্লিষ্ট জর্ডানি এলাকা। মুসলিম বাহিনী এখানে এসে অবস্থান নেন। মুসলিম গুপ্তচররা এসে খবর দিলেন যে , রোমের কায়সার বালকা অঞ্চলের মাআব এলাকায় এক লক্ষ রোমান সৈন্য সমাবেশ করে রেখেছে। এছাড়া তাদের পতাকাতলে লাখাম , বলকিন , বাহরা এবং বালা গোত্রের আরো এক লক্ষ সৈন্য সমবেত হয়েছিল। উল্লেখিত শেষোক্ত এক লক্ষ আরব গোত্রসমূহের সমন্বিত সেনাদল। 

মজলিসে শূরার বৈঠক 

Fiverr workspace



মুসলমানরা ধারণা করতেই পারেনি যে , তারা কোনো দুর্দর্ষ সেনাদলের স্মুখীন হবেন। দূরবর্তী এলাকায় তারা সত্যিই সঙ্কটজনক অবস্থার স্মুখীন হলেন। তাদের সামনে এ প্রশ্ন মূর্ত হয়ে দেখা দিলো যে , তারা কি তিন হাজার সৈন্য সহ দুই লক্ষ সৈন্যের সাথে মোকাবেলা করবেন ? 

বিস্মিত চিন্তিত মুসলমানরা দুইরাত পর্যন্ত পরামর্শ করলেন। কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করলেন যে , মুহাম্মদ (সাঃ) কে চিঠি লিখে উদ্ভুত পরিস্তিতি সম্পর্কে অবহিত করা হোক। এরপর তিনি হয়তো বাড়তি সৈন্য পাঠাবেন অথবা অন্য কোনো নির্দেশ দেবেন। সেই নির্দেশ তখন পালন করা যাবে। 


হজরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) দৃঢ়তার সাথে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। তিনি বললেন , হে লোক সকল , আপনারা যা এড়াতে চাইছেন এটাতো সেই শাহাদাত যার জন্য আপনারা বেরিয়েছিলেন।  স্মরণ রাখবেন যে শুত্রুদের সাথে আমাদের মোকাবেলার মাপকাঠি সৈন্যদল , শক্তি এবং সংখাধিককের নিরিখে বিচার্য নয়।

 আমরা সেই দ্বীনের জন্য লড়াই করি , যে দ্বীন দ্বারা আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদেরকে গৌরবান্বিত করেছেন। কাজেই সামনের দিকে চুলুন। আমরা দুইটি কল্যাণের মধ্যে একটি অবশ্যই লাভ করবো। হয়তো আমরা জয়লাভ করবো অথবা শাহাদাত বরণ করে জীবন ধন্য হবে। অবশেষে আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার মতা মতের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হলো। 


Fiverr Business



মুসলিম বাহিনীর অগ্রযাত্রা 

মাআন নামক এলাকার দুই রাত অতিবাহিত করার পর মুসলিম বাহিনী শুত্রুদের প্রতি অগ্রসর হলেন। বালকার মাশারেফ নামক জায়গায় তারা হেরাক্লিয়াসের সৈন্যদের মুখোমুখি হলেন। শুত্রুরা আরো এগিয়ে এলে মুসলমানরা মুতা নামক জায়গায় গিয়ে সমবেত হন। এরপর যুদ্ধের জন্য সৈন্য দের বিন্যাস্ত করা হয়। ডানদিকে কোটাবা ইবনে আজরিকে এবং বামদিকে ওবাদা মালেক আনসারী (রাঃ) কে নিযুক্ত করা হয়। 



[মুতার যুদ্ধ : মুহাম্মাদ (সাঃ) জীবদ্দশায় সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ । পর্ব ০২ ]




আরো পড়ুন :














Post a Comment