সমরকন্দ
বাণিজ্য এবং ইসলামী সাংস্কৃতির কেন্দ্র স্থল হয়ে উঠার ইতিহাস
খিস্টের জন্মের ২০০০ বছর আগেই মানুষ সামারকান্দে বসবাস করা শুরু করে। সমরকন্দের অবস্থান চীন ও পশিমা বিশ্বের মধ্যে। যেকারণে সমরকন্দ বাণিজ্য পথ সিল্ক রোডের মধ্যে হওয়ায় প্রাচীনকাল থেকেই এর গুরুত্ব অপরিসীম। সময়ের সাথে সাথে সিল্ক রোডের পর সমরকন্দ বাণিজ্যের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। পশ্চিমা রাজ্য গুলি থেকে সিল্ক রোডে বাণিজ্যের জন্য যাওয়া কাফেলা গুলো সামারকান্দে বিশ্রাম নিতো। প্রাচীনকালের বাণিজ্যের দ্বিতীয় কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় শহরটি মধ্যে এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ হয়ে উঠে ছিলো। খিস্টপূর্ব ৭০০ অব্দে প্রাচীন পারস্যের সগদিয়ানা প্রদেশের রাজধানীতে পরিণত হয়। পশ্চিমা গ্রিকদের কাছে শহরটি মারাকান্দা নামে পরিচিত ছিলো কিন্তু ইতিহাসের বীর আলেকজান্ডার যিনি এই শহরটি ৩২৯ খিষ্টাব্দে জয় করেন তার কাছে ইস্কান্দার নামে পরিচিত ছিল।
৮ম শতকে আরবরা শহরটি জয় করেন এবং শিগ্রই এটি ইসলামী সাংস্কৃতির একটি কেন্দ্রে পরিনিত হয়। ১২২০ সালে চেঙ্গিস খান শহরটি প্রায় ধ্বংস করে দেয়। ১৩৬৯ সালে তৈমুর লং সামারকান্দে তার সাম্রাজ্যের রাজধানী বানালে শহরটি আবার উন্নতি শুরু করে। ১৫ শতকে এসে তৈমুরের সম্রাজ্যের পতন হলে ১৪৯৯ সালে উজবেকরা শহরটির দখল নিয়ে নেয়। উজবেক শাসকেরা তাদের সম্রাজ্যের রাজধানী বোখারায় সরিয়ে নেওয়ার পর সমরকন্দের গুরুত্ব কমে যায়। ১৭৮৪ সালে এটি বোখারা শহরের আমিরের অধীনে চলে আসে। ১৮৬৮ সালে যখন রাশিয়া শহরটি দখলে নেয় তারপর থেকে শহরটির আবার গুরুত্ব পেতে শুরু করে।
অবস্থান ও দর্শনীয় স্থান
সমরকন্দ উত্তর পূর্ব উজবেকিস্তান এর জারিফসান নদী উপত্যাকায় অবস্থিত। কারাশি থেকে সমরকন্দ ১৩৫ কিমি দূরে অবস্থিত। সড়ক এম ৩৭ একে ২৪০ কিমি দূরে বুখারার সাথে সংযুক্ত করে। তাজিকিস্তান সীমানা সমরকন্দ থেকে প্রায় ৩৫ কিমি দূরে , দুশানবে যাওয়ার রাস্তা যা ২১০ কিমি দূরে। রোড এম ৩৯ এটি আফগানিস্তানের মাজার শরীফের সাথে সংযুক্ত করে যা ৩৪০ কিমি দূরে অবস্থিত।
সামারকান্দে চা , ওয়াইন , বস্ত্র , সার এবং মোটরযানের যন্ত্রপাতি উৎপাদিত হয়। এই শহরটি অতি প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে একটি , এই শহরটি নতুন এবং পুরাতন দুই ভাগে বিভক্ত। শহরের পুরাতন অংশে আছে বহু সৌধ ১৪ শ ও ১৫ শ শতকে নির্মিত মসজিদ এবং ১৫ শ শতকে নির্মিত মঙ্গোল দিগ জয়ী শাসক তৈমুর লং এর সমাধি। সামারকান্দে একটি বিশ্ববিদ্যলয় ও প্রাচীন একটি জাদুঘর অবস্থিত।
প্রধান দর্শনীয় স্থান
১৩৯৯ সালে ভারতের সাথে যুদ্ধের পর তৈমুর লং সিদ্ধান্ত নেন সামারকান্দে একটি মসজিদ নির্মাণ করবেন। সেই পরিপেক্ষিতে বিবি খানম মসজিদ নির্মাণ হয় অত্যান্ত দামি পাথর দিয়ে যা ভারতীয়দের বিরুদ্ধে জয়ের বৈশিষ্ট বহন করে। ভারত থেকেও কারিগর , পাথর আনা হয় যারা মসজিদটির গম্বুজ নকশা করেন। এটি অন্য ভবনগুলোর মধ্যে নিজের স্বতন্ত্রতা এনে দিয়েছিলো। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে মসজিদটির একটি অংশ ভেঙে পরে। যাইহোক ১৯৭৪ সালে উজবেকিস্তান সরকার এই মসজিদটি পূর্ণনির্মান শুরু করে , যার ফলে এখন যে মসজিদটি দেখা যাচ্ছে সেটা একেবারে নতুন যার মধ্যে পরোনোত্ত মসজিদের কোনো ধ্বংসাবশেষ নেই।
ধর্ম
অষ্টম শতাব্দীতে মধ্যে এশিয়া তে আরবদের বিজয়ের সময় সমরকন্দে ইসলাম প্রবেশ করেছিল উমাইয়া খেলাফতের মাধ্যমে। তার আগে সমরকন্দের সমস্ত বাসিন্দা ছিল জরাথুষ্ট্র বাদী। এছাড়া অনেক নেস্টোরিয়ান এবং গৌতম বুদ্ধর অনুসারী ছিল। আরবরা সমরকন্দ বিজয়ের পর সমরকন্দের জনগণকে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলো , যার ফলে সমরকন্দে ইসলামি ভূমিতে পরিনিত হলো। মুসলিম যুগেই অধিকাংশ মসজিদ , মিনার , মাদ্রাসা নির্মাণ হয়েছে।
সমরকন্দের বেশিরভাগ বাসিন্দা মুসলমান যাদের বেশির ভাগ সুন্নি এবং সুফিবাদী মুসলমান। সমরকন্দ এ বেশির ভাগ মানুষ তাজিক , উজবেক এবং সামারকান্দিয়ান। এবং অল্প সংখক ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষ রয়েছে।
Post a Comment