লবণের ইতিহাস

HISTORY OF SALT |  লবণের ইতিহাস

আমরা সবাই লবন সম্পর্কে জানি এবং চিনি খনিজ পদার্থ হিসাবে। কিন্তু আমরা কি কখনো লবন বা লবণের ইতিহাস সম্পর্কে ভেবে দেখেছি। মানুষের জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের সাথে লবন এর নাম বা এই পদার্থটা অতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে আসে। যদিও লবণের আবিষ্কার ৫৪০০ বছর আগে হয়েছে লবণের খনি পাওয়া যায় বর্তমান নাম বলকান অঞ্চলে যার পূর্ববর্তী নাম ছিল সলনিটসটা এই নামের অর্থ " লবণের কাজ "। প্রাচীনকালে লবন কে সাদা সোনা বলা হতো। বিশেষ করে এশিয়া মাইনর থেকে আনাতোলিয়া এবং ৯০০ সালের দিকে তুর্ক ম্যান গোক সাম্রাজ্যের মধ্যে বেশি প্রচলিত ছিল। গোক সম্রাজ্যের লোকজন মনে করতো লবণের মাধ্যমে তাদের দেবতার থেকে আসা অভিশাপ গুলাথেকে মুক্তির উপায় নিহিত আসে।  তারা লবণের মাধ্যমে তাদের দেবতা গোক - ট্যানারি সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতো। 


HISTORY OF SALT |  কি করে লবন মানবসভতায় এলো









প্রাচীনকালে লবন প্রক্রিয়া করণের কিছু নজির আছে। প্রায় ৬০০০ সালের দিকে যখন বর্তমান রোমানিয়া অঞ্চলে বসবাসকারী লোকেরা লবন আহরণের জন্য সাগরের পানি ফুটাতো , একই সময়ে চিনে ও লবণের ব্যবহার শুরু হয়। প্রাচীন ইব্রীয় , গ্ৰীক , রোমান , বাইজান্টিনাম , মিশর , তুর্কি  এবং ভারতীয়রা লবন ব্যবহার করতো। অতঃপর লবন বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠে। ভুমধ্যসাগর দিয়ে লবন পরিবহনের জন্য পানি পথ এবং সাহারা মরুভুমি দিয়ে উটের মাধ্যমে লবন পরিবহন করতো। লবণের ঘাটতি এবং লবণের সার্বজনীন প্রয়োজনীতার জন্য ওই সময়ের সাম্রাজ্য গুলোকে লবণের উপর রাজস্ব কর দার্য্য করা হতো , এমনকি সাম্রাজগুলা লবণের জন্য যুদ্ধে যেত। লবন প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে ব্যাবহার হয়ে আসছে এবং এর অনেক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে। 






ইতিহাস জুড়ে লবণের প্রাপ্যতা সভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ । যেটি লবণের প্রথম শহর বলে মনে করা হয় সেটি হলো বুলগেরিয়া , যেখানে একটি লবণের খনি ছিল যা ৫৪০০ বছর আগের। যদিও মানুষ গত একশো বছর ধরে খাবার সংগ্রহ করার জন্য কৌটাজাতকরণ এবং হিমায়ন পদ্বতি অবলম্বন করছে , তথাপি হাজার হাজার বছর ধরে লবন সবচেয়ে পরিচিত খাদ্য হিসেবে সংরহ করে আসছে ,
 বিশেষ করে মাংসের জন্য। কিছু প্রমান আছে যেগুলা ইঙ্গিত দেয় যে পূর্ব  কুকুটানি সংকৃতের নব্য প্রস্তর যুগের লোকেরা ৬০৫০ সালে লবন আহরণের জন্য ব্রিকটেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লবন সমৃদ্ধের ঝর্ণা থেকে পানি নিষ্কাশন করে লবন সংগ্রহ করতো। এই পদ্বতি থেকে লবন আহরণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরপরই এই সমাজের জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। 



HISTORY OF SALT |  কি করে লবন মানবসভতায় এলো

                                                 খনি থেকে সংগ্রহ করা একটি লবণের দানা। 



উদ্ভিত টিস্যুর তুলনাই প্রাণী টিস্যুতে বেশি লবন থাকে। যেমন মাংস , লবন এবং দুধ।  যারা যাযাবর ছিল তাদের পৃথকভাবে লবণের প্রয়োজন হয়নি কারণ তারা পশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তবে যারা কৃষক যারা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো তাদের লবণের প্রয়োজন ছিল জীবিকা নির্বাহের জন্য। সভ্যতার বিস্তারের সাথে সাথে লবণ বিশ্বের অন্যতম প্রধান ব্যাবসায়িক পণ্যে পরিচিত হয়। প্রাচীন হিব্রু, গ্রিক , রোমান , বাইজান্টিন , হিট্র্যাতিত , তুর্ক এবং প্রাচীনকালের অন্যন জনগোষ্ঠীর কাছে লবণের মূল্য অনেক বেশি ছিল। মধপ্রাচ্যে আনুষ্টানিক ভাবে চুক্তি সিলমোহর করতে লবন বিনিময় করা হতো।

 প্রাচীন হিব্রুরা দেবতাদের সাথে একটি লবণের চুক্তি করেছিল এবং তার প্রতি আস্তা দেখানোর জন্য তাদের নৈবদ্যগুলোতে লবন ছিটিয়ে ছিল। যুদ্ধের সময় প্রাচীন লোকেদের একটি অভ্যাস ছিল যে তারা জমিনকে লবনাক্ত করতো , এবং অনেক সাম্রাজ্য লবণের জন্য যুদ্ধে যেত। বাইবেলের রাজা আবি - মেলিককে সেকেম নামক স্থানে লবন ছিটানোর জন্য ঈশ্বর আদেশ করেছেন। এবং বিভিন্ন গ্রন্থে দাবি করা হয়েছে যে , রোমান সেনাপতি সিপিও এমিলিয়ান্স আফ্রিকান্স তৃতীয় পিউনিক যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর কার্টেজ শহরকে লবন দিয়ে চাষ করেছিলেন। 








নব্য প্রস্তর যুগে আনাতোলিয়াতে বাণিজ্যের সময় লেনদেনের জন্য কাচের মতো দেখতে একজাতীয় অগ্ন্যাওয়শীলা নামক বস্তু পণ্য বিনিময়ের জন্য লবন ব্যবহার করতো। ৩০০০ সালের দিকে প্রাচীন মিসরীয়রা সমাধিতে প্রাপ্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নৈবেদ্ গুলির মধ্যে লবন অন্তর্ভুক্ত ছিল। আনুমানিক ২৮০০ খিস্টপূর্বাব্দ থেকে , মিশরীয়রা লেবাননের সিডার , কাচ এবং প্রাকৃতিক বেগুনি রঙের বিনিময় ফিনিসিয়ানদের কাছে লবন মাছ রপ্তানি শুরু করে। ফিনিসিয়ানরা তাদের ভুমধ্যসাগরে বাণিজ্য সম্রাজ গড়ে তোলে এবং মিশরের লবন যুক্ত মাছ ও উত্তর আফ্রিকায় লবণের ব্যবসা করতো। হিরোডোটাস খিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে লিবিয়া জুড়ে লবন ব্যাবসার জন্য পথ তৈরি করেছিলেন। রোমান সম্রাজ্যের প্রথমদিকে লবন আমদানির জন্য অস্ট্রিয়া থেকে লিবিয়ার রাজধানী পর্যন্ত লবন পরিবহনের জন্য রাস্তা তৈরি করেছিলেন। 


বেতন শব্দটি এসেছে লবণের ল্যাটিন শব্দ থেকে। এর কারণ অজানা বর্তমানে অনেকেই দাবি করেন রোমান সৈন্য দেড় মাঝে মাঝে বেতনের পরিবর্তে লবন বেতন হিসাবে দেয়া হতো। তবে এ দাবি  ভিত্তি হীন।  সালাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ লবণযুক্ত এবং শাক সবজি লবনাক্ত বা লবণযুক্ত করার প্রথাটি প্রাচীন রোমানদের কাছ থেকে এসেছে। 


You have to wait 60 seconds.





Post a Comment