নুসাইরিয়া পর্বত ত্যাগের পর সালাহউদ্দিন দামেস্কে ফায়ার আসেন। তার সিরিয়ান সেনারা বাড়ি ফিরে আসে। তিনি তুরান শাহকে সিরিয়ার দায়িত্ব দেন এবং ব্যাক্তিগত লোকদের নিয়ে মিশরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ২২ সেপ্টেম্বর তিনি কায়রো পৌছান। দুই বছর অনুপস্থিত থাকার পর ফিরে আসায় মিশরকে সংগঠিত ও তদারক করার জন্য তার সময় ব্যয় করতে হয়। শহরের প্রতিরক্ষা মজবুত করা হয়।
শহরের দেয়াল সংস্কার করা হয় এবং বর্ধিত অংশ তৈরী করা হয়। এসময় কায়রো দুর্গের নির্মাণ শুরু করা হয়। ২৮০ ফুট গভীর বির ইউসুফ (ইউসুফের কুয়া) সালাহুদ্দিনের নির্দেশে খনন করা হয়। কায়রোর বাইরে নির্মিত প্রধান স্থাপনা ছিল গিজার বড় সেতু। মুরিশ আক্রমণ ঠেকাতে প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে এটি নির্মিত হয়েছিল।
সালাহউদ্দিন কায়রোর উন্নয়ন সাধন করেন। এখানে তলোয়ার প্রস্তুতকারকদের শিক্ষালয় স্থাপন করা হয় এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক আদেশ এখান থেকে দেয়া হত। ১১৭৭ সালের নভেম্বরে তিনি ফিলিস্তিনে আক্রমণ পরিচালনা করেন। ক্রুসেডাররা সম্প্রতি দামেস্কের অঞ্চলের ভেতর আক্রমণ চালায়। ফলে সালাহুদ্দিন চুক্তি আর বলবত নেই ধরে নেন। আলেপ্পোর উত্তরে হারিমের দুর্গ দখলের জন্য ক্রুসেডাররা বড় আকারের একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন।
ফলে দক্ষিণ ফিলিস্তিনে কম সংখ্যক প্রতিরক্ষাকারী অবস্থান করছিল। সালাহুদ্দিন অবস্থা অনুকূল বিবেচনা করেন আসকালন যাত্রা করেন। একে তিনি “সিরিয়ার বধু” বলতেন। উইলিয়াম অব টায়ারের বিবরণ অনুয়ায়ী আইয়ুবী সেনাবাহিনীতে মোট ২৬০০০ সেনা ছিল আদের ৮,০০০ ছিল বিশেষ সৈনিক আর ১৮,০০০ সুদানের কালো সৈনিক। সেনাবাহিনী গ্রামাঞ্চলের দিকে এগিয়ে গিয়ে রামলা ও লুদ আক্রমণ করে এবং তাদের জেরুজালেমের ফটক পরন্ত তাড়িয়ে নেয়।
আইয়ুবীর রাজা বল্ডউইনকে তার গাজা ভিত্তিক টেম্পলারদের নিয়ে আসকালনে প্রবেশ করতে দেয়। ক্রুসেডার বাহিনী শুধু ৩৭৫ জন নাইট নিয়ে গঠিত হলেও সালাহুদ্দীন দক্ষ সেনাপতিদের উপস্থিতির জন্য আক্রমণ থেকে বিরত থাকেন। ২৫ নভেম্বর আইয়ুবী সেনাবাহিনীর বৃহৎ অংশ অনুপস্থিত থাকায় মন্টগিজার্ডের যুদ্ধে সালাহুদ্দীন ও তার সেনারা রমলার কাছে অতকির্ত আক্রমণের সম্মুখীন হন। সেনারা অবস্থান গঠনের আগে টেম্পলাররা আইয়ুবী সেনাদের উপর ঝাঁপিয়ে পরে। প্রাথমিকভাবে সালাহুদ্দীন তার সেনাদের সুসংগঠিত করতে সচেষ্ট হন। কিন্তু তার পরবর্তী কালে পরাজয় অনিবার্য হয়ে উঠায় তিনি সেনাদের নিয়ে মিশরে ফিরে আসেন।
যুদ্ধে পরাজয়ে দমে না গিয়ে সালাহুদ্দিন পুনরায় ক্রুসেডারদের সাথে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেন। ১১৭৮ সালের বসন্তে তিনি হোমসের দেয়ালের কাছে ঘাঁটি স্থাপন করেন এবং তার সেনাপতিদের সাথে ক্রুসেডার সেনাদের কিছু খন্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়। হামায় তার বাহিনী জয়লাভ করে এবং অনেক শত্রুসেনা বন্দী হয়। বিশৃংখলা সৃষ্টির দায়ে তাদের শিরোচ্ছেদের আদেশ দেয়া হয়। বছরের বাকি সময় তিনি সিরিয়ায় শত্রুদের সাথে লড়াই না করে অবস্থান করেন।
সালাহুদ্দীনের গোয়েন্দারা তাকে জানায় যে ক্রুসেডাররা সিরিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। তিনি তার সেনাপতি ফররুখ শাহকে তার এক হাজার সেনা নিয়ে দামেস্কের সীমানায় কোনো আক্রমণ হচ্চে কিনা তা দেখার জন্য পাহারা দেবার নির্দেশ দেন এবং যুদ্ধ এড়িয়ে ফিরে আস্তে বলেন। তাকে বলা হয় এরপর পাহাড়ের উপর মশাল জ্বালানোর জন্য যাতে সালাহউদ্দিন এরপর অগ্রসর হতে পারেন।
১১৭৯ সালের এপ্রিল বল্ডউনের নেতৃত্বাধীন ক্রুসেডাররা কোনো প্রতিরোধ হবে না ধরে রাখে এবং গোলান মাতৃভূমির পূর্বে মুসলিম পশুপালকদের উপর আচমকা হামলা চালানোর অপেক্ষায় থাকেন। ফররুখশাহর বাহিনীর উদ্দেশ্যে বল্ডউইন খুব দ্রুত যাত্রা করেন। তাদের মধ্যে সংঘটিত লড়াইয়ে আইয়ুবীরা জয়ী হয়। এ বিজয়ের পর সালাহুদ্দিন মিশর থেকে আরো সেনা আনার পরিকল্পনা করেন। তিনি আল আদিলকে ১৫০০ ঘোড়সওয়ার পাঠাতে বলেন।
১১৭৯ সালের গ্রীষ্মে রাজা বন্ডউইন দামেস্কের দিকের পথে একটি চৌকি স্থাপন করেন এবং জর্ডান নদীর দিকের পথ সুরক্ষিত করতে চান। সালাহুদ্দিন ১,০০,০০০ স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে এই কাজ বন্ধের জন্য বল্ডউইনকে প্রস্তাব দেন। কিন্তু এতে সাড়া মেলেনি। এরপর তিনি টেম্পলারদের অবস্থান করা চেস্টেলেট নামক দুর্গ ধ্বংস করতে উদ্যত হন।
ক্রুসেডাররা দ্রুত মুসলিমদের আক্রমণ করতে এগিয়ে আসলে বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। তাদের পদাতিকরা পিছিয়ে পড়ে। তারা প্রাথমিক সাফল্য লাভ করলেও সালাহুদ্দিন পরে সফল হন এবং তার সেনারা ক্রুসেডারদের আক্রমণ করে। যুদ্ধে আইয়ুবীরা জয়ী হয়। অনেক উচ্চপদস্থ নাইট গ্রেপ্তার হয়। সালাহুদ্দিন এরপর দুর্গ দখলের জন্য যাত্রা করেন। ১১৭৯ সালের ৩০ এপ্রিল এটির পতন হয়।
১১৮০ সালের বসন্তে সালাহুদ্দীন সফেদ অঞ্চলে অবস্থান করার সময় জেরুজালেমের ক্রুসেডার রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক আকারের অভিযান চালানোর ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন। বল্ডউইন তার কাছে শান্তিপ্রস্তাব পাঠান। খরা ও ফসল কম থাকায় সালাহুদ্দিন চুক্তিতে উপনীত হন। রেমন্ড অব ট্রিপলি এই চুক্তির বিরোধিতা করলেও পরে তার এলাকায় আইয়ুবী সেনাদের এক অভিযান ও টারটুস বন্দরে সালাহুদ্দীন নয়বহর উপস্থিত হওয়ার পর তা মানতে রাজি হন।
Post a Comment